‘সংস্কারের নামে অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা সম্মানজনক হবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ মে ২০২৫, ২০:৪৬
শেয়ার :
‘সংস্কারের নামে অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা সম্মানজনক হবে না’

বিচার ও সংস্কারের নামে অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা সম্মানজনক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এ দেশের মানুষ সেটি মেনে নেবে না। এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট স্বচ্ছ নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছিলাম, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আপনি সেটি গ্রহণ করেছিলেন। আবার সেখান থেকে সরে গেছেন।  

আজ শনিবার সার্কিট হাউজ মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, কিন্তু মনে করবেন না রোজ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইতো। ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘আপনার সরকারকে লোকজন বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুই জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা এবং এনসিপি সংগঠন করে। আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাদের এনসিপি মার্কা দুইজনকে পদত্যাগ করতে বলুন। পদত্যাগ না করলে আপনি বিদায় করুন। আপনার কেবিনেটে আরও কিছু উপদেষ্টা আছে, তারা ফ্যাসিস্টদের দোসর এবং কিছু এনজিও প্রতিনিধি আছে, তারা দেশে নির্বাচন দিতে চায় না। তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলুন। অন্যথায় আপনি তাদের বিদায় করুন। আপনার দায়িত্ব শুধুমাত্র নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু এখন দেখছি আপনি কথিত মানবিক করিডোর দিতে চাচ্ছেন। দেশের নৌ ও স্থাল বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছেন। অথচ এই ম্যান্ডেট এদেশের জনগণ আপনাকে দেয়নি। আপনি জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, কিন্তু রাজনৈতিকদল গুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেন না এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করলেন না। ’

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেলজ্ঞান নেই। তিনি বলেন, একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী কিভাবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে। তিনি রোহিঙ্গা, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বিদায় করুন।একজন বিদেশি নাগরিকের হাতে জাতীয় নিরাপত্তা কতোটুকু নিরাপদ থাকবে সেটি এখন বড়ো প্রশ্ন। ওই উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না’। 

সালাউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এ দেশের মানুষ যদি নির্বাচনের জন্য যমুনা অভিমুখে লং মার্চ করে, সেটি হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। এদেশের জনগণ নির্বাচনের জন্য যমুনা অভিমুখে লং মার্চ সেটি কাম্য নয়অ আমরা সব সময়ই বলেছি নির্বাচন ও সংস্কার কাজ এক সঙ্গে চলবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার পূর্বের সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ তারুণ্যের উদ্দেশ্যে বলেন, গত জুলাই মাসে তারুণ্যের রক্তভেজা রাজপথের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু সেই কাঙ্খিত গণতন্ত্রের মুক্তি মেলেনি। এদশের মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তাই মানুষের ভোটধিকার প্রয়োগ করে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করার জন্য তরুণ সমাজকে অ্যাম্বেসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের অর্থ লুটপাট, পাচার এবং ব্যাংকিং সেক্টরে ডাকাতির বিষয় একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১৫ বছরে ৪ লাখ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো দেইলিয়া হয়ে গেছে। সে অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেতো। আওয়ামী সরকার নিজেদের লো দের লোন দিয়ে প্রতিবছরে ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। যা গত ১৫ বছরে সাড়ে ২৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

তিনি পতিত শেখ হাসিনাকে বিশ্ব খুনী আখ্যায়িত করে বলেন, শেখ হাসিনা একজন বিশ্ব খুনী। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে প্রায় ১৪০০ লোককে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা খুনের রাজনীতির ইতিহাস প্রতিষ্টা করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্রকে সাংবিধানিকভাবে হত্যা করার ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিকভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। এতো কিছুর পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং দিল্লিতে বসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিষদগার করে চলেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মের মাধ্যমে। আর তার দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশে প্রায় ৭ হাজার মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। এ ছাড়া গুম, খুন চালিয়ে বিরোধী মতের মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। তাই আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের অপসারণ করেছে।

বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।