প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুর জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে নারী উন্নয়ন শক্তি। এছাড়াও তাদের উন্নয়ন, সুরক্ষা এবং ক্ষমতায়নের জন্য ১০ দফা জরুরি দাবি জানায় সংস্থাটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাড্ডাস্থ ‘নারী উন্নয়ন শক্তি (NUS)’র সভাকক্ষে প্রতিবন্ধী নারী, শিশু, বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালার আয়োজন করে নারী উন্নয়ন শক্তি (NUS), ইয়াং উইমেন ফর ডেভেলপমেন্ট রাইটস অ্যান্ড ক্লাইমেট (YWDRC) এবং ফোরাম ফর কালচার অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (FCHD)।
কর্মশালায় নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আর আলোচনায় অংশ নেন ইয়াং উইমেন ফর ডেভেলপমেন্ট রাইটস অ্যান্ড ক্লাইমেট-এর সভাপতি নুসরাত সুলতানা আফরোজ এবং ফোরাম ফর কালচার অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট-এর সভাপতি সাহিদা ওয়াহাব।
প্রতিবন্ধী নারী সুখী এবং প্রতিবন্ধী পুরুষ হাবিব ওই কর্মশালায় তাদের জন্য অতি স্বল্প বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমান বাজারে সরকারি ভাতা দিয়ে মাসের দুই দিনেরও খরচ হয় না।’
কর্মশালার আলোচনার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের উন্নয়ন, সুরক্ষা এবং ক্ষমতায়নের জন্য ১০ দফা জরুরি দাবি উত্থাপন করা হয়, যা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
দাবিগুলো-
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
১. বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও আলাদা কোড চালু: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের জন্য পৃথক বাজেট কোড চালুসহ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক, যাতে তাদের জন্য উন্নয়নমূলক, মানবাধিকার ও নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়।
২. সহিংসতা প্রতিরোধে আইন বাস্তবায়ন ও ট্রাইব্যুনাল গঠন: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হোক।
৩. সুরক্ষা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন: প্রতিটি জেলায় প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুর জন্য সুরক্ষা কেন্দ্র, কাউন্সেলিং সেবা ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন সুবিধাসহ একটি সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।
৪. প্রতিবন্ধী-বান্ধব অবকাঠামো ও পরিবহন: সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন (বাস ও ট্রেনে) সমূহে র্যাম্প, এলিভেটর, টয়লেট, ভিজ্যুয়াল সাইনসহ বাধ্যতামূলক প্রতিবন্ধীবান্ধব সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও চাকরির সুযোগ: প্রতিবন্ধী নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ, অনুদানভিত্তিক সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নীতিমালাভিত্তিক যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
৬. মানসম্মত অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা: প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ইনক্লুসিভ শিক্ষা ব্যবস্থা, সহায়ক উপকরণ (ব্রেইল, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ), বিশেষ শিক্ষক নিয়োগ এবং সকল পর্যায়ের টিউশন ফি মওকুফ ও শিক্ষা ভাতা নিশ্চিত করা হোক।
৭. যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা: প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারীদের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি, যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা এবং থানায় বিশেষ সহায়তা সেল গঠন করা হোক।
৮. স্থানীয় এনজিওদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন: প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের উন্নয়নে অভিজ্ঞ স্থানীয় এনজিও ও প্রতিবন্ধী সংগঠন সমূহকে বাজেটের অংশ দিয়ে প্রকল্প গ্রহণ এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত করা হোক।
৯. তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ: BBS ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সমন্বয়ে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হোক।
১০. কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম: এনজিওদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের পারিবারিক অবহেলা, সহিংসতা প্রতিরোধে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সচেতনতামূলক নাটক, আলোচনা সভা ও ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হোক।
নারী উন্নয়ন শক্তি মনে করে, এই ১০টি দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের জীবনমানের উন্নয়ন, সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিগণ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এই দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আহ্বান জানান।
নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন বলেন, “প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের উন্নয়নে আমাদের বাজেট, আইন, অবকাঠামো এবং সচেতনতা-এই চারটি স্তম্ভে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”