আ. লীগ নেতার নামে সুইসাইড নোট লিখে ঠিকাদারের আত্মহত্যা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
১৩ মে ২০২৫, ১২:৫৫
শেয়ার :
আ. লীগ নেতার নামে সুইসাইড নোট লিখে ঠিকাদারের আত্মহত্যা

ফরিদপুরে নুরুজ্জামান বুলবুল (৪৮) নামে এক তরুণ ঠিকাদার ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি গ্রামে পৈত্রিক বাসভবনের ২য় তলার একটি কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ সময় তার ওই কক্ষ থেকে মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একাধিক সুইসিডাল নোট তথা চিরকুট উদ্ধার করা হয়। এর একটিতে লেখা ছিলো- ‘বিল্লাল ভাই আমাকে আর বাঁচতে দিলেন না। ’ 

ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীক বিরোধ ও পারিবারিক ঝামেলার কারণে বুলবুল আত্মহত্যা করেছেন।

জানা গেছে, নিহত নুরুজ্জামান বুলবুল কৈজুরীর বাসিন্দা মরহুম মোজাফফর হোসেন রাঙা মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র। তার বাবা ফরিদপুরের মুন্সিবাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। রাঙা মিয়া চার বছর আগে মারা যান। এরপর গত বছর বুলবুলের মাও মারা যান। স্ত্রী ও ৩ মেয়ে রয়েছে নিহত বুলবুলের। তাদের নিয়ে কৈজুরিতে পৈত্রিক বাসভবনে বসবাস করতেন তিনি। 

এদিকে স্থানীয়রা জানান, নুরুজ্জামান বুলবুল আগেরদিন রবিবার দুপুরের দিকে তাদের তিনতলা বাসভবনের দোতলার ওই কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। এরপর আর তার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সোমবার বিকেলে পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। 

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বুলবুলের মরদেহ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। 

ওসি বলেন, ‘এটি আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু, তা এখনই বলা যাচ্ছেনা। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে তার মৃত্যুর কারণ।’

জানা গেছে, নিহত নুরুজ্জামান বুলবুল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঠিকাদারি করতেন। সর্বশেষ তিনি বাগেরহাটে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের বড় কাজ শেষ করেন। বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের প্রথমদিকে পার্শ্ববর্তী হাড়কান্দি নিবাসী জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যোগ দেন। মুন্সিবাজার বাইপাস মোড়ের পাশে বুলবুল ও বিল্লালের যৌথ মালিকানায় কেনা জমির উপরে চারতলা একটি বিল্ডিং তৈরি করা হয়। ব্যবসায়িক লেনদেনের বাইরেও বিল্লালের সঙ্গে তার বড়ভাই-ছোটভাই সুলভ সম্পর্ক ছিল।

জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই বহুল আলোচিত ২ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলার আসামি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের মুরগি খামারের ম্যানেজার ছিলেন বিল্লাল হোসেন। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মোশাররফ হোসেনের পতনের পর থেকে বিল্লাল হোসেন আত্মগোপনে চলে যান। তিনি মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

নিহত বুলবুলের কক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সুইসাইড নোটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বিল্লাল হোসেনের বক্তব্য জানা যায়নি। এ বিষয়ে বুলবুলের পরিবারের কেউও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা গেছে, নিহত নুরুজ্জামান বুলবুলের স্ত্রী ও ৩ মেয়ে রয়েছে। তার মেজ মেয়ের সঙ্গে প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদের সঙ্গে বিয়ে হয়। পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে বুলবুলের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের ঝামেলা চলছিল। এর আগে তিনি ঝগড়া এড়াতে মেয়েদের নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। 

এদিকে বুলবুলের মরদেহ উদ্ধারের সময় উদ্ধার হওয়া একটি চিরকুটে বুলবুল লিখেছেন, ‘আল্লাহ পাক যদি আমার মৃত্যু দেয়, তাহলে আমার মেয়েরা যেন আমার মরামুখ না দেখে। আর কবর যেন আমার মায়ের কবরের পাশে হয়, এ বাড়িতে নয়।‘

প্রসঙ্গত, গত বছর নুরুজ্জামান বুলবুলের মায়ের মৃত্যুর পর তাকে কৈজুরি ইউনিয়নের মামুদপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।