কারখানা বন্ধে জীবিকার সংকটে কৃষক-শ্রমিক

অনলাইন ডেস্ক
১২ মে ২০২৫, ০১:১৯
শেয়ার :
কারখানা বন্ধে জীবিকার সংকটে কৃষক-শ্রমিক

কুষ্টিয়ায় একটি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জীবিকার সংকটে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি, অনাকাঙ্ক্ষিত শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ হয়ে যায় বিএটি বাংলাদেশের গ্রিন লিফ থ্রেশিং প্ল্যান্ট (জিএলটি)। উত্থাপিত দাবি নিয়ে শ্রমিকদের একাংশের অনীহার কারণে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায়, কারখানাটির উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।

মৌসুমি শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে টানা দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের এ কারখানা। বিষয়টি ঘিরে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে কৃষি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ খাতসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে। দ্রুত সমাধান না হলে, এ অচলাবস্থার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে অর্থনীতি।  

মৌসুমি শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে এ সঙ্কটের শুরু হয়। তামাক মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে আন্দোলনের ফলে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় কারখানার কার্যক্রম। এ পরিস্থিতির কারণে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ৫০ হাজারেরও বেশি কৃষক, এর মধ্যে অনেকেই তামাক পাতা সংগ্রহ করেছেন, কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকায় তা বিক্রি করতে পারছেন না।

জানা গেছে, তামাক পাতা ক্রয় ও কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলে, পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া, আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে এখনও সমঝোতা না হওয়ায়, উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকার কারণে শঙ্কার মুখে পড়েছে তামাক চাষের ওপর নির্ভরশীল এ ৫০ হাজার কৃষকের ভবিষ্যৎ।

বিএটি সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৮৪৬.৭৫ কোটি টাকার তামাক প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করেছে। বৈশ্বিক বাজারে তামাকের চাহিদা বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই খাত। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ থাকায় কৃষকের আয়, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং সরকারের রাজস্ব অর্জন—তিনটিই ঝুঁকিতে পড়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে শুধু ১২৮ জন মৌসুমি শ্রমিকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, পাশাপাশি, বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। পাশাপাশি, স্থানীয় পরিবহনকর্মী, প্যাকেজিং সরবরাহকারী, হোটেল ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতি ও রপ্তানিনির্ভর শিল্পের পারস্পরিক নির্ভরতা এতটাই গভীর যে, এই ঘটনাকে একটি স্থানীয় সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়া এই সংকট এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি করেছে। শিল্পখাতে স্থিতিশীলতা ও নীতিগত ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারলে, দেশের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কয়েক দশক ধরে, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি, নীতিগত সহায়তা ও ধারাবাহিকতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন ও রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সুনাম ও আস্থা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। চলমান শ্রমিক অসন্তোষ, এক্ষেত্রে, বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে। শ্রমিকদের অধিকার অবশ্যই আইনসঙ্গত কাঠামোর মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে, নিশ্চিত করতে হবে, দ্রুত এ ধরনের পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, যা অর্থনীতি ও শিল্পখাতকে সংকটের মুখে ফেলবে।

কুষ্টিয়ার শ্রমিক অসন্তোষের ব্যাপারে জানা গেছে, অনেক শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নিতে চাননি। কিন্তু চাপের মুখে তাদের আন্দোলনে যুক্ত হতে হয়েছে। এবং অল্প কয়েকজন শ্রমিক নিজস্ব উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

খাত বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতিতে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শ্রমিক প্রতিনিধি, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে উন্মুক্ত সংলাপ ও তথ্যভিত্তিক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সকল পক্ষের উচিত এমন একটি সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া, যা একদিকে জীবিকা রক্ষা করবে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। তারা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আশু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কারখানার অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত সমাধান না হলে, তা দেশের শিল্পখাত ও অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।