পর্দার মমতাময়ী মায়েরা
পর্দার তারা মা। খুব সুন্দরভাবেই মায়ের রূপে তারা ফুটিয়ে তোলেন পর্দায়। যে কারণে নির্মাতাদের কাছে এই মায়েদের গ্রহণযোগ্যতাও অনেক বেশি। আর হবেইবা না কেন, শোবিজের তারকা শিল্পীরাও তাদের ‘মা’ বলেই ডেকে থাকেন। শুটিং সেটে তারা একজন মা হয়েই মমতার আঁচলে আটকে রাখেন সবাইকে। আজ বিশ্ব মা দিবসে তাদের গল্পই তুলে ধরা হলো এই আয়োজনে।
গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামান
মায়ের চরিত্রে অনবদ্য এক অভিনেত্রীর নাম দিলারা জামান। একুশে পদকে ভূষিত এই অভিনেত্রী বয়স ৮১ বছর। এখনও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন শোবিজে। নাটক, সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে মিডিয়ার সবার কাছে তিনি মা হিসাবেই সম্মান পেয়ে থাকেন। নাটকের পাশাপাশি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেত্রী। ষাটের দশকে কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে মা চরিত্রে পর্দায় জনপ্রিয় উঠেন তিনি। বর্তমানে নাটকেই তার বেশি ব্যস্ততা। মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে অনেক খ্যাতিও অর্জন করেছেন তিনি। পেয়েছেন মা পদকও।
অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা
মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা আরেকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা। তিনি অনেক সিনেমাতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ১৯৮৯ সালে ‘জিনের বাদশা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। মা হিসেবে অসংখ্যবার পর্দায় হাজির হয়েছেন তিনি। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে মমতাময়ী মা হিসেবেই বেশি পরিচিত কল্পনা।
অভিনেত্রী আনোয়ারা
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
ষাটের দশকে বাংলা সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন আনোয়ারা জামাল। তবে শোবিজে সবাই তকে চেনে আনোয়ারা বেগম নামেই। আর এই এক নামেই তার খ্যাতি দেশজুড়ে। নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করে এই জীবন্ত কিংবদন্তি পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। শুরুতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করলেও পরবর্তীতে মায়ের চরিত্রেই পর্দায় বেশি উপস্থিত হয়েছেন তিনি। তার সাবলীল অভিনয় মন ছুঁয়েছে আট থেকে আশির বৃদ্ধকেও।
মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা আনোয়ারার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘মায়ের স্বপ্ন’, ‘সমাধি’, ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘মায়ের চোখ’, ‘দাঙ্গা’, ‘রাধা কৃষ্ণ’, ‘ভাত দে’, ‘বর্তমান’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ইত্যাদি।
অভিনেত্রী ডলি জহুর
ঢাকাই সিনেমার আরেক জনপ্রিয় মা- ডলি জহুর। তার মায়াভরা চোখ, সংবেদনশীল সংলাপ ও মাতৃত্বের আবেগময় রূপান্তর তাকে পরিণত করেছে বাংলা সিনেমা ও নাটকের ‘মায়ের প্রতিমূর্তি’ হিসেবে। মা চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেছেন তিনি। আজ বিশ্ব মা দিবসেও বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হচ্ছেন এই অভিনেত্রী। পাচ্ছেন ‘মা পদক’।
অভিনেত্রী রওশন জামিল
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
কিংবদন্তি অভিনেত্রী রওশন জামিল। প্রায় ২’শ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। পর্দায় তিনি বিশেষত গ্রামীণ বা আত্মত্যাগী মায়ের চরিত্র- দারুণভাবে ফুটে তুলেছেন। মা হিসেবে তার উল্লেখযোগ্য কাজ ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘দহন’, ইত্যাদি।
অভিনেত্রী শাবানা
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। তার প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্মা। শোবিজের ৩৬ বছরের ক্যারিয়ারে ২৯৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়ও। শাবানাকে প্রথম পর্দায় মায়ের ভূমিকায় দেখা যায় ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায়। যদিও খুব বেশি মা হিসেবে পর্দায় হাজির হননি তিনি। তবে যে ক’টি সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা আজও দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে। বর্তমানে অভিনয়কে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। ২৫ বছর ধরে আছেন অভিনয় থেকে দূরে।
অভিনেত্রী ববিতা
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। তার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। ষাটের দশকের শেষ দিকে অভিনয় শুরু করেন তিনি। বলা যায়, সত্তরের দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন ববিতা। নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম সিনেমা ছিল ‘শেষ পর্যন্ত’। ক্যারিয়ার জুড়ে ববিতা তিনশো’র বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সাতবার জাতীয় পুরস্কারজয়ী এ অভিনেত্রী নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে নিয়মিত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘মহামিলন’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘অবুঝ বউ’, ‘খোদার পরে মা’, ‘মনের জ্বালা’, ‘সবাইতো ভালবাসা চায়’, ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না’।
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’
অভিনেত্রী সুচরিতা
ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা সুচরিতা নব্বই দশকের শেষে এসে মায়ের ভূমিকায় নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সিনেমাটিতে দেশের জন্য নিজের সন্তানকে উৎসর্গের দৃশ্যটি দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কেটে যায়।
এছাড়াও নাটক-সিনেমায় মায়ের চরিত্রে রূপদান করছেন এমন আরও অনেক অভিনেত্রী রয়েছেন। এই তালিকায় আছেন- রাশেদা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রেহানা জলি, শিল্পী সরকার অপু, চিত্রলেখা গুহ, মিলি বাশার, শারমিন আক্তার, সাবেরী আলম, রেবেকা রউফ, মনিরা মিঠু, সাবিহা জামান’সহ অনেকেই। এদের মধ্যে অনেকেই এখনও নিয়মিত নাটক-সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছেন।