‘আমরা যেন ভূ-রাজনীতির খেলায় পা না দেই’

অনলাইন ডেস্ক
১০ মে ২০২৫, ১৫:০৭
শেয়ার :
‘আমরা যেন ভূ-রাজনীতির খেলায় পা না দেই’

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইস্যুতে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কেউ যেন কোনো সুযোগ নিয়ে ফায়দা লুটতে না পারে এবং কারও কোনো বক্তব্য যেন কোনো পক্ষকে উসকে না দেয়। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে গিয়ে আমরা যেন ভূ-রাজনীতির খেলায় পা না দেই।’

আজ শনিবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণ নিয়ে এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান চৌধুরী এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংস্থার চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

ছায়া সংসদে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়ন আছে। বিগত সময়গুলোতে তারা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেনি। সম্পর্কের তিক্ততা থাকলেও ভারত পাকিস্তানের বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর হচ্ছে বিবাদমান দু’দেশের রাজনীতিবিদদের দাবার গুটি। নরেন্দ্র মোদির জন্য সামনে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জয়ী হওয়া বড় এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে মোদি এই যুদ্ধকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। এবারের যুদ্ধের অন্যতম দিক হচ্ছে ভুয়া সংবাদ, এআই ও ড্রোনের ব্যবহার। ভূ-রাজনীতিতে এ যুদ্ধের প্রভাব অনেক বেশি। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তবে দু’দেশের প্রয়োজনে এই যুদ্ধ থামাতে হবে।’ 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু যেমন দুঃখজনক, তেমনই ভারতের সামরিক হামলায় পাকিস্তানের বেছে বেছে মসজিদ ধ্বংস করাসহ ৩২ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যা করার যে অভিযোগ উঠেছে তাও দুঃখজনক। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলমান থাকলে বিশ্ব এই দুই পারমাণবিক শক্তির সংঘাতের ভার বইতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে মুসলিম-হিন্দুর যুদ্ধ হিসেবে উসকে দেওয়া যাবে না।তবে বিজেপি সরকার কতৃর্ক ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে ভারতীয় মুসলমানদের স্বস্তি প্রদান করা উচিত।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে উল্লে করে তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে, সাপ্লাই চেইন নষ্ট হবে,পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়বে, ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করার জন্য সময় এবং বিমান ভাড়া দুটিই বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুনের উত্তাপ নিজের গায়েও লাগবে।’ 

কিরণ আরও বলেন, ‘দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলাকালীন অবস্থায় বিএসএফ পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়ে ১৬৭ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশ ইন করেছে। যাদের বিএসএফ রোহিঙ্গা বলে দাবি করছে। বিএসএফ কতৃর্ক পুশ ইনের চেষ্টা আমাদের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তের শিলিগুড়ি করিডোরের “চিকেন নেক” অঞ্চলে বিএসএফ বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে তা মোকাবিলা করতে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা জরুরি।’ 

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের মূল কারণ রাজনৈতিক নয় ঐতিহাসিক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।