এবার শামীমের বিরুদ্ধে আরেক অভিনেত্রীর অভিযোগ
হঠাৎ করেই জনপ্রিয় অভিনেতা শামীম হাসান সরকারকে নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে টেলিভিশন অঙ্গনে। তার বিরুদ্ধে মারধর, এমনকি ধর্ষণের হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া। দাবি করেছেন- শামীম তার সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন। এমনকি প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকিও দিয়েছেন।
যদিও প্রিয়াঙ্কার অভিযোগের পরই সংবাদ সম্মেলন করেন শামীম হাসান সরকার। যেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
প্রিয়াঙ্কার অভিযোগের পর শামীমের বিরুদ্ধে শুটিং সেটে আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আরেক অভিনেত্রী, বাচিক শিল্পী ও সঞ্চালক সিফাত বন্যা।
দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শামীম হাসান সরকার নামে একজন ভাঁড় আছে। সে গতকাল একজন অভিনেত্রীকে প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। সেই সেটের ডিরেক্টর থেকে শুরু করে সবাই নাকি চুপ ছিল! চিন্তা করেন এদের অবস্থা! এদের মানসিকতা!’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘গত দুই বছর আগে রাজধানীর উত্তরায় একটি শুটিং হাউজে বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন ওর (শামীম) সাথে আমার কাজের পরে। আমি এডিকে (এসেস্টেন্ট ডিরেক্টর) বলি আমাকে ২টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। কারণ চারটার সময় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের অনুষ্ঠানে আমাকে আবৃত্তি করতে হবে। সেদিন আমার খুব জ্বরও ছিল। মেকআপ রুমে যাওয়ার পর ওর সাথে (শামীম) এডি আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। ভাঁড়ের সাথে ওইদিনই আমার প্রথম কাজ ছিল। পরিচয়ের পরে হাই-হ্যালো হলো এবং এডি ওকে বলেও ছিল আমার খুব জ্বর। তাই এসিটা কমিয়ে দিলাম। মেকআপ রুমে আমি, ভাঁড় আর মেকআপ আর্টিস্ট। আমি বসে বসে স্ক্রিপ্ট পড়ছি। আর ভাঁড় জোরে জোরে ইংরেজি গান, হিন্দি গান বাজাচ্ছে। একটু পর এসিটাও বাড়িয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এডি যে ওকে বলে গেল আমার জ্বর তাতে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। তবুও সিনিয়র যেহেতু আস্তে করে উঠে গিয়ে বললাম ভাইয়া আমার তো খুব জ্বর এসিটা কমালে খুব ভালো হতো। তাছাড়া গানের সাউন্ড নিতে পারছি না আর আজ বুদ্ধিজীবী দিবস চলুন বাংলা গান শুনি। একথা বলতেই ও মেকআপ আর্টিস্টের সামনেই আমাকে বলে আপনার জ্বর আমি কি করব! আপনি বাইরে যান। আর আপনি আমাকে ইন্টেলেকচুয়ালিটি শেখাচ্ছেন! মানে একদম চেঁচিয়ে। মনে হচ্ছিল, সে পারলে গায়ে হাত তুলবে।’
সিফাত বলেন, ‘একজন নারী সহকর্মীর সাথে তার এমন আচরণ আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। স্বাভাবিক বিষয় শুরুতে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। কিন্তু পরে বলেছি মেকআপ রুম আপনার একার নয়। মেকআপ রুম আমাদের সবার। এক কথায় দুই কথায় দুজনেই কথা কাটাকাটি করি। ডিরেক্টর এবং এডি এসে দুইজনকে দুই রুমে নিয়ে যায়। পরে ওকে ঠান্ডা করে, আমাকেও। এরপর ও আমার সাথে কাজ করবে বলে কিন্তু আমি বলেছিলাম এক কোটি টাকা দিলেও আমি ওর সাথে কাজ করব না। সেট ছেড়ে চলে এসেছিলাম।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আমি তো ডিরেক্টর আর এডির জন্য ওখানে আর কথা বলতে পারলাম না। সেও পারেনি। সবকিছু মিলে সেটে অনেক কিছু ঘটলেও আমাদের আগে কাজের কথা চিন্তা করতে হয় কারণ টাকার কাজ। অনেক ইনভেস্টমেন্টের কাজ। সবকিছু মিলিয়ে অনেক কিছু সহ্য করে চুপ থাকতে হয়। আমি চলে আসি। তারপর জেলা প্রশাসকের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করি। আমি একজন শিল্পী। আমাকে মেকআপ আর্টিস্টের সামনে রুম থেকে বের হয়ে যান বলাটা মাথা থেকে সরাতেই পারছিলাম না। চূড়ান্ত অপমানই করেছিল একজন নারী সহকর্মী হিসেবে।’
যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুটিংয়ের পরের দিন ওর (শামীম) জন্মদিন ছিল। মোবাইল খোলার পরেই দুপুরে প্রথম কলটা আমার যায়। আমি ওকে বলি গতকাল তো তোকে আর কিছু বলতে পারিনি। তোকে আমি জুতা দিয়ে পিটাইতে চাই, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ২ মিনিট কথা বলার পরে ও কেটে দেয়। এটা নিয়ে ডিরেক্টরকে আবার বিচারও দেয়, হা হা হা।’
এই বাচিক শিল্পী বলেন, ‘অনেকেই বলতে পারে আমি পরে এটা ঠিক করিনি। তবে একজন নারী সহকর্মী হিসেবে আমার সাথে সে যে ধরনের রক্তচক্ষু নিয়ে কথা বলেছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কোথাও এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাভও নেই। আর আমি আমার অপমান মানতে পারছিলাম না। তাই আমি এটা করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ডিরেক্টর এডি না থাকলে ও আমার গায়ে হাত তুলতে পারে। আমি ট্রমায় পড়ে গিয়েছিলাম।’
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’
এদিকে, সিফাত বন্যার পোস্ট শেয়ার করে অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ লিখেছেন, ‘সুযোগ পেলে কেউ আঁতলামি কম করে না। আগে শামীমের অবস্থানে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন, পরে এসির বাতাস খাইয়েন। আমরা সিনিয়ররা মেকআপ রুমে থাকলে ১০বার চিন্তা করতাম যাব কি যাব না। চিপায়-চাপায় ধোয়া ফুকা এবং তাদের দেখলে চেষ্টা করতাম যতটুকু সভ্য থাকা যায়। জ্বর ঠান্ডা থাকলে বাসায় থাকা ভালো। মিডিয়াতে নায়িকা সেজে নায়িকা হওয়া যায় না। এ লেখা আমি পড়িও নাই। পড়ার ইচ্ছাও নাই। শামীম একজন সৎ মানুষ। আমি অবশ্যই তার পক্ষে। শামীমকে নিয়ে এমন প্যাঁচ খেলা আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। দু’দিন পরপরই হবে। বসে আলোচনা করে মিটমাট করেন। এদেশে ভালো অভিনয় জানা শিল্পী কম। বেশির ভাগ ওয়ানাবি।’