রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমের ‘স্বাধীনতা’ চায় ছাত্র ফেডারেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ মে ২০২৫, ১৮:৩৭
শেয়ার :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমের ‘স্বাধীনতা’ চায় ছাত্র ফেডারেশন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্র ফেডারেশনের একটি ভবনের দেয়াল লিখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিনটি বিষয়ে বাধা না নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সেখানকার একটি বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সের একটি দেয়ালে ছাত্র ফেডারেশনের নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘আড্ডা-প্রেম-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়া চলবে না।’ এখানকার ‘প্রেম’ শব্দটি নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছেন।

ছাত্র ফেডারেশনের এমন দাবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ড. মো. মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে আমাদের জানতে হবে, প্রেমের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছে। এই এককথা দিয়ে তো সব বোঝা যায় না।’

প্রেমে বাধা না দেওয়া অর্থাৎ স্বাধীনতা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে তারা ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন।  

রায়হান মুজিব নামের এক ছাত্র লিখেছেন, ‘একটা প্রেম করিয়ে দেবার দায়িত্ব নিলে আমি সদলবলে এই সংগঠনে যোগ দিতে ইচ্ছুক, দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

কামরুজ্জামান কল্লল লিখেছেন, ‘এজন্যই এদের কেউ সিরিয়াসলি নেয় না। শ্রমিক মুক্তি থেকে প্রেমে চলে গিয়েছে।’

সম্রাট হাফিজুর লিখেছেন, ‘এর পর যে কি দাবি করবেন তা বুঝতেই পারছি। ওসব নোংরামি এ ক্যাম্পাসে হবে না।’

মো. মাজহারুল ইসলাম মেহেদুল লিখেছেন, ‘মেয়াদ উত্তির্ন (সঠিক বানান মেয়াদোত্তীর্ণ) গাজা খেয়ে ক্লাশ করলে এই ছাড়া আর কি শিখবে এই শিক্ষিত ছাত্র ফেডারেশন।’  

মো. বাপ্পী লিখেছেন, ‘এই পোস্টটা ৫ বছর আগে দিলে, ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দিতাম। তাও যদি একটা প্রেম হতো।’

প্রেমের স্বাধীনতা কেন চাওয়া লাগছে, ক্যাম্পাসে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সদস্যসচিব ওয়াজিদ শিশির অভি বলেন, ‘এখানে প্রেমে বাধা দেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল একসময়, কিংবা এখনো আছে।’  

আপনাদের কাছে প্রেমের সংজ্ঞায়ন কী—এমন প্রশ্নের জবাবে অভি বলেন, ‘অতো ডিপে না গিয়ে এই ধরেন আমি বললাম যে, একটা মানুষ প্রেম করতেছে। নারী-পুরুষের যে স্বাভাবিক সম্পর্ক। এখানে প্রেম বলতে আলাদা কিছুই বোঝাইনি। নরমালি মানুষ প্রেম করে না? ওই ধরনের প্রেমে বাধা না দেওয়া।’

কোন বিষয়টিকে প্রেম হিসেবে ধরে আপনারা স্বাধীনতা চান—এ বিষয়ে অভি বলেন, ‘এটার কোনো সংজ্ঞা নাই। সরাসরি নরমাল যে প্রেম হয়, এই প্রেমের স্বাধীনতা চাওয়াও না, বাধা দেওয়া চলবে না। বাধা না দেওয়া যদি স্বাধীনতা হয়, তাহলে স্বাধীনতা।’

শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি কি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এ ধরনের কোনো পরিচিস্থিতি তৈরি হয়নি। তার আগে ওরা (ছাত্র ফেডারেশন) যেটা লিখেছে, সেটার ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার) বক্তব্য নেওয়া উচিত যে, প্রেমে বাধা দেওয়া বলতে ওরা কী বোঝায়?’

তিনি আরও বলেন, ‘ওরা যেটা লিখেছে, সেটার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে আমদের জানা নাই, অশ্লীলতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা যে কার্যক্রম করছি, সেটাকে যদি ওরা বাধা মনে করে, তাহলে সে বিষয়ে আমাদের…।’  

ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রক্টর বলেন, ‘আমাদের ভাবনা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে এসেছে পড়াশোনাটাই মূল। একজন ছেলে-মেয়ের সাথে রিলেশন হয়, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, কেউ যদি প্রকাশ্যে অশ্লীলতা করে, দৃষ্টিকটু যেটা লাগে—আমার মনে হয় সবাই সেটাকে বাধা দেবে।’