‘এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা!’
সংগীত যুগল ওস্তাদ বারীণ মজুমদার ও ইলা মজুমদারের সন্তান বাপ্পা মজুমদার। সংগীত পরিবারেরই তার বেড়ে ওঠা। ১৯৬৩ সালে দেশের একমাত্র সরকারি সংগীত কলেজ’র যাত্রা শুরু হয়েছিল সংগীতবিশারদ বারীণ মজুমদারের হাত ধরেই। কিন্তু একটা সময় সেই কলেজ থেকেই বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। সেই সময় বাপ্পা ছিলেন ছোট। তবে তার স্মৃতিতে আজও স্মরণীয় সেদিনের কথা।
অতীতের স্মৃতি স্মরণ করে বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘আমার ছোটবেলার সেই প্রিয় মিউজিক কলেজ থেকে যেদিন আমাদেরকে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়েছিল, সেই দিনটি আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে! বাবা মিউজিক কলেজের দোতলায়, এলোমেলো চুল, গায়ের সেই পরিচিত কোটটা নেই, টাইটা গলায় ঝুলছে। বাবা আমাদের দোতলা থেকে চিৎকার করে বলছেন, “তোমরা যাও, আমি আসছি।’ আর তখনকার আমি সদ্য নার্সারিতে পড়ি। একটা রিকশাতে তুলে দেওয়া হলো আমাদের! মা ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছেন বাবার দিকে। দোতলা থেকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে আমাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র আর স কিছু! এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা!’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আচমকা ঠিকানা হলো মগবাজারের একটি বাসায়, মেজদা, ফারুক কাকু আর বাবার কিছু ছাত্র- গুণগ্রাহীর সহায়তায়! বাবা সেই বাসায় আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রেপ্তার হলেন মিথ্যা মামলায়! বাবা ফিরলেন ১৮ দিন পর। কাজ কর্মহীন মানুষটি হয়ে পড়লেন ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় চরমতম হতাশ আর দিশেহারা!’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
ওই সময়টা মা ইলা মজুমদারই সামলে নিয়েছেন সবকিছু জানিয়ে বাপ্পা বলেন, ‘মা দূর্গার মতো সব সামলে নিতে পা বাড়ালেন তার স্ত্রী ইলা মজুমদার! সংসারটাকে বাঁচাতে মরণপর যুদ্ধে নামলেন সেই অতিমানবী! চাকরি নিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। সব যুদ্ধে জয় করলেন সেই মানুষটি! এক ভয়ংকর যুদ্ধে সব সামলে ধরলেন সংসারের হাল। আজ আমাদের অস্তিত্ব যদি টিকে থাকে তার সর্বময় কৃতিত্ব আমার মায়ের। যার নাম ইলা মজুমদার।’
সবশেষে এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘ইলা মজুমদার শুধু একটি নাম নয়, তিনি একজন উদাহরণ। তিনি শুধু একজন স্ত্রী বা মা নন, বরং তার চেয়েও বড় একজন মানুষ। যিনি সবকিছু তুচ্ছ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কতটা শক্তিশালী! তিনি একজন সুপার হিউম্যান! এবং আমি গর্বিত, আমি ইলা মজুমদারের ছেলে।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট