সিকৃবির ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের উচ্চমূল্য ও মান নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের উচ্চমূল্য এবং মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনের খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হলেও খাবারের স্বাদ, গুণগত মান এবং ক্যান্টিনের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাফেটেরিয়ায় রান্নার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বও বিভিন্ন খাবারের দাম মাত্রাতিরিক্ত। অথচ ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানগুলোত একই দামে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর থেকে দেওয়া খাবারের মূল্য তালিকা থেকে দেখা যায়, ভাতের প্যাকেজ মাছ/মুরগি ও সবজিসহ ৫৫ টাকায় বলা হলেও সবজি হিসেবে সামান্য আলু ব্যতীত কিছু দেওয়া হয় না। এছাড়াও মাছ মাংসের সাইজ যথেষ্ট ছোট। তালিকায় ডিম মামলেটের দাম ধরা হয়েছে ২০ টাকা যা ডিমের বাজা মূল্যের দ্বিগুণ। এছাড়াও গরুর মাংসের কথা উল্লেখ থাকলেও কখনো এগুলো রান্না কিংবা পরিবেশন করতে দেখেননি শিক্ষার্থীরা। এমনকি পরোটা, সিঙ্গারা, সমুচা, জিলাপির দাম পরিমাণ অনুযায়ী বেশি ছোট। ক্যাফের পরিবেশ নিয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ।
ভেটেরিনারি অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া হিসেবে আমাদেরটা মানসম্মত নয়। আমাদের ক্যাফেতে বসার পরিবেশ মোটামুটি ঠিক থাকলেও খাবার মান খুবই নিম্ন মানের। বিশেষ করে বেকারি থেকে যে খাবারগুলো আনা হয় সেগুলো ভালোভাবে দেখে আনা হয়না। খাবারে অনেক সময় পিঁপড়া পাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের ক্যাফেতে কোন বহুমাত্রিকতা নাই। সকাল ও বিকালে খাবারের মেন্যুতে নুডুলস, চটপটি এইরকম বহুমাত্রিক চার্ট যুক্ত করা প্রয়োজন।’
মুরাদ আলম নামের এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের ক্যাফেটেরিয়ার গল্প শুনে মনে হয়েছে সিকৃবির ক্যাফেটেরিয়া বাইরের অন্য দু-একটা হোটেলের মত। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, যেন খাবারের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধি করার দিকে নজর দেয়া হয়।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগে থেকে কয়েকবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখনো কোন স্থায়ী সমাধান আসেনি। অনেকেই বলছেন, নিয়মিত তদারকি এবং কঠোর ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই সমস্যা কাটবে না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে- নিরাপদ খাবার পানি এবং পানির গ্লাস পরিষ্কার রাখা, সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, খাবারের মাঝে অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু যেন না থাকে, খাবারের গুণগত মান বাড়ানো, খাদ্যতালিকায় উল্লেখিত খাবারের পর্যাপ্ততা, গরুর মাংস, রোস্ট, অন্যান্য সবজি, ভর্তা আইটেমের ব্যবস্থা করা, ওয়াশরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা এবং ক্যান্টিনের বেসিনে হ্যান্ডওয়াশের ব্যাবস্থা করা।
অভিযোগের বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালক নুরে আলম শাহিন বলেন, খাবারের মূল্য ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আগে মুরগিসহ ভাতের প্যাকেজ ৬০ টাকা ছিল সেটা কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছে। এ ছাড়াও খাবারের তালিকায় মুরগির রোস্ট যুক্ত করা হয়েছে। এই দামে ভালো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।
খাবারের মান ও ক্যান্টিনের পরিছন্নতা নিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেই প্রতিদিন রাতে ক্যাফেটেরিয়া পরিষ্কার করি। আমরা হলের ডাইনিং থেকেও ভালো চাল ব্যাবহার করি। সবজি হিসেবে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা দিচ্ছি। অন্যান্য সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও সেগুলো দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সিকৃবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার বলেন, ‘গত সপ্তাহে ক্যাফেটেরিয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে আমরা মিটিং করে খাবারের মূল্যের একটি তালিকা দিয়েছি যা পূর্বে ছিল না। এখানে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট না। শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও বাজারের মূল্যের ওপর নির্ভর করে এই তালিকা আমরা পরিবর্তন করবো।’
ক্যাফেটেরিয়ার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি যেন খাবার পরিবেশনের জায়গাসহ সম্পূর্ণ ক্যাফে পরিষ্কার রাখা হয়। এতে কোন ব্যত্যয় হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।’