ঘুষের জন্য এমপিওভুক্তির ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ে ফের অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মাউশি রাজশাহীর উপ-পরিচালক (ডিডি) ড. আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তির ৯২টি ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল এই অভিযান চালায়।
কর্মকর্তারা জানান, মাউশি রাজশাহীর ডিডি আলমগীর কবির ঘুষ ছাড়া ফাইল অনুমোদন করেন না-এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর আগে গত ১১ মার্চ একই অফিসে অভিযান চালিয়ে ডিডি আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ১৫১টি ফাইল আটকে রাখিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এবার তার বিরুদ্ধে আরও ৯২টি ফাইল আটকে রাখার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। তবে অভিযানের সময় তিনি কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে এমপিওভুক্তির জন্য সম্প্রতি ১৫২টি আবেদন জমা পড়ে। এগুলো প্রথমে পরিচালক মো. আছাদুজ্জামানের দপ্তরে জমা হয়। ত্রুটিপূর্ণ ৪৭টি আবেদন বাতিল করে তিনি বাকি ১০৫টি ফাইল সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিনের কাছে পাঠান। পরবর্তীতে তিনি ফাইলগুলো ডিডি আলমগীর কবিরের কাছে পাঠান। কিন্তু তিনি ৯২টি ফাইল আর পরিচালকের কাছে পাঠাননে।
মাউশি রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফাইল পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিডি আলমগীর কবির নানা অজুহাতে ফাইল পাঠাননি। এর আগেও যখন তিনি ১৫১টি ফাইল আটকে রেখেছিলেন, তখন বহুবার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। তার বিষয়ে অনেক কথাই কানে আসে।’
দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখার অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এবার ৯২টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তির বলে তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে উপ-পরিচালক হিসেবে মাউশিতে যোগদান করেছেন। গত দুই সপ্তাহ আগে আমরা ওনার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছি। আজকে আবার একই অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করলাম। আমি জানি না কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তিনি এখনো স্বপদে বহাল আছেন। আমার মনে হয় বিষয়টি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।'
ফাইল পাঠানোর সময় ৬ মে পর্যন্ত থাকা সত্ত্বেও এই অভিযান কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আমির হোসাইন বলেন, ‘তিনদিনে ৯২টা ফাইল পাঠানো সম্ভব নয়।’
দুদকের এই অভিযান ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে উপ-পরিচালক ড. আলমগীর কবির বলেন, ‘ফাইল আটকে রাখার প্রশ্নই আসে না। আগামী ৬ মে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠানোর শেষ সময়। অথচ ফাইল পাঠানোর নির্দিষ্ট সময়সীমার ৫দিন আগেই দুদক কিভাবে জানতে পারলো যে, আমি ফাইল আটকে রেখেছি। দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি করেছে। আমার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ার পরও একজন দুদক কর্মকর্তা বলেছেন, আমি নাকি অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো স্বপদে বহাল আছি।’
মাউশির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি মাসের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সাড়ে ৮ হাজার সংশোধিত ফাইল পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১৫০টি ফাইল আটকে ছিল। রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০টি ফাইলের কাজ শেষ করে পাঠানো হয়েছে। বাকি যে ফাইলগুলো ছিল সেগুলো আজকে রাতের মধ্যেই পাঠানো সম্ভব। এর মধ্যে এখনো ৬ মে পর্যন্ত সময় আছে। অথচ আমি ফাইল আটকে রেখেছি এমন অভিযোগ তুলে দুদক অভিযান পরিচালনা করেছে- যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
আলমগীর কবির বলেন, ‘অফিস আদেশের ভিত্তিতে আমি আজ (বুধবার) পদোন্নতির একটি মিটিংয়ে নওগাঁ ডিসি অফিসে ছিলাম। অথচ অফিসে না থাকা অবস্থায় দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেছে।’
এর আগে গত ১১ মার্চ মাউশিতে অভিযান চালায় দুদক। তখনও উপ-পরিচালক আলমগীর কবিরের কক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি ফাইল তারা জব্দ করে নিয়ে যায়। কিন্তু সেগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি দুদক।