সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে
বর্তমান সরকার সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার ও স্বচ্ছতার ওপর জোর দিচ্ছে। তার অংশ হিসেবে সরকারি ক্রয় ডিজিটাইজেশন করা হচ্ছে, যা হলো ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি)। সরকার শিগগিরই ক্রয়কার্যে ই-জিপির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে। সুতরাং সকল ক্রয়কারীকেই ই-জিপিতে টেন্ডার করতে হবে। দরদাতাগণও যেহেতু সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার অবিচ্ছ্যদ্য অংশ সুতরাং তাদেরকেও ই-জিপির মাধ্যমেই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে হবে।
বর্তমানে দেশে সরকারি ক্রয়ের প্রায় ৬৫ শতাংশ ই-জিপির মাধ্যমে হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এটি শতভাগে উন্নীত করতে কাজ করছে। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি চুক্তি ব্যবস্থাপনাও এখন ই-জিপির মাধ্যমে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় আজ বিপিপিএর কার্যাবলী এবং ই-জিপি বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মশালায় সভাপতি হিসেবে বিপিপিএর পরিচালক (উপসচিব), লাবনী চাকমা এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। বিপিপিএর আয়োজিত কর্মশালাটি ব্যবস্থাপনা করেছে বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস (বিসিসিপি)।
লাবনী চাকমা বলেন, ‘সরকারি ক্রয় জনগণের টাকায়ই করা হয়। সেজন্য জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ক্রয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে বিপিপিএ কাজ করছে।’
প্রকল্পের অপচয় এবং বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা রোধ করার জন্য সরকার বারবারই তাগিদ দিচ্ছেন। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ শত প্রকল্প এডিপিতে থাকে। এ প্রকল্পগুলো যদি সঠিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়, তাহলে অর্থনীতিতে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে লক্ষ্যে ই-পিএমআইএস চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের রিয়েল-টাইম ডেটা অফিসে বসেই পাওয়া যায়। এটি ই-জিপি সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত আছে।
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘বিপিপিএ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে দেশে টেকসই সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’
ই-জিপি একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড ব্যবস্থা যা সরকারি ক্রয়কে অনেক গতিশীল ও সহজ করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ই-জিপির অনেক আধুনিকায়ন হয়েছে এবং এটি অব্যাহত রয়েছে।
বিপিপিএ (পূর্বতন সিপিটিইউ) ই-জিপিতে বেশ কিছু নতুন মডিউল যুক্ত করেছে, যা সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় করে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের তথা ক্রয়কারী কর্মকর্তা ও দরপত্রদাতাদের ছাড়াও নিরীক্ষক, ব্যাংকারসহ সকলের কাজকে সহজ করেছে।
ই-জিপির সুফল অনেক। এর ফলে অনেক বাড়তি কাজ কমে গেছে। বিপিপিএ-এর অন্যতম অগ্রাধিকার সরকারি ক্রয়কাজে ই-জিপি‘র ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কাজে গতিশীলতা আনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বিপিপিএ যথেষ্ট ভালো কাজ করছে।
ই-জিপিতে এখন ই-সিএমএস, দরদাতা ডাটাবেজ, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান অডিট যুক্ত করা হয়েছে। iBAS++ এর সঙ্গেও ই-জিপি‘র আন্ত:সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ই-জিপি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সিস্টেম। দরদাতাগণ এখন ই-জিপি নিবন্ধন, নবায়ন ও দরপত্র জামানত এবং ডকুমেন্ট ক্রয়ের ফি অনলাইনের এর মাধ্যমেও দিতে পারেন। সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ ই-জিপির মাধ্যমে অনলাইনেই দরপত্র যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন এবং চুক্তি সম্পাদনসহ চুক্তির বাস্তবায়ন ও পরবর্তীতে সম্পাদিত চুক্তির বিপরীতে দরপত্রদাতাদের অর্থ প্রদানও ডিজিটালি সম্পন্ন করতে পারেন। ফলে এ সংক্রান্ত অনেক জটিলতা কমেছে। ই-জিপিতে ই-অডিট চালুর ফলে এখন আর অডিটের জন্য ক্রয়কারী কার্যালয়ে যেতে হবে না।
অনুষ্ঠানে নারায়ণগন্জ জেলার বিভিন্ন সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, দরপত্রদাতা, ব্যাংকার স্হানীয় সাংবাদিকসহ প্রায় ৭০ জন উপস্থিত ছিলেন।
একই দিনে বিকেলে জেলার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে বিপিপিএ সরকারি ক্রয় ও ইজিপি বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অয়োজন করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমানের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষ অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিপিপিএ পরিচালক (উপসচিব) লাবনী চাকমা। দরদাতাসহ সংশ্লিষ্টদেরকে ই-জিপি’তে আরো দক্ষ করতে ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারি ক্রয়কারী কর্মকর্তা ও দরপত্রদাতা উভয়েই উপকৃত হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?