মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০০
শেয়ার :
মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা

রংপুর নগরীতে মাদ্রাসার সহ-সভাপতি কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম সরদার।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম নাহিদ হাসান নীরব। সে বড় রংপুর কারামতিয়া কামিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির আবাসিক শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বর্ডির সহ-সভাপতি শামসুজ্জোহা সুজা।

প্রত্যক্ষদর্শী আলিম দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত সরকার ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত জানান, গত সোমবার আসরের নামাজের পর আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মাদরাসা হোস্টেলের আবাসিক ছাত্ররা হোস্টেলের সামনে অবস্থিত মাদরাসা ক্যাম্পাসের আম গাছে ঢিল ছুঁড়ে আম পাড়ার চেষ্টা করছিল। সেখানে প্রায় ১২ জন ছাত্র উপস্থিত ছিল। ওই সময় মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি শামসুজ্জোহা সুজা মোটরসাইকেলযোগে এসে কনিষ্ঠ ছাত্র (মাদরাসা হোস্টেলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির আবাসিক ছাত্র) নাহিদ হাসান নীরবকে গলা টিপে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করলে সে তাৎক্ষণিক বমি করে। উপস্থিত সকলের প্রচেষ্টায় নীরবকে তার হাত থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। এ সময় সামসুজ্জোহা উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীকে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শামসুজ্জোহা সুজা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। তিনি প্রায়ই মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদরাসা হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। মাদরাসার সহ-সভাপতি হওয়ায় অধ্যক্ষ ও হল সুপার তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পান না। তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে মাদরাসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অনেক অভিযোগ পাওয়া যাবে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত শামসুজ্জোহা সুজার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে এঘটনায় অভিযুক্ত শামসুজ্জোহা সুজাকে মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ এবং মাদরাসা ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অভিযুক্তকে বাঁচাতে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বড় রংপুর কারামতিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আলতাফ হোসাইন বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত নই। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি আমাদের মাদরাসার অভিভাবক। এই প্রতিষ্ঠানে তার অনেক অবদান আছে। আমাকে না জানিয়ে শিক্ষার্থীকে দিয়ে থানায় অভিযোগ করে শিক্ষার্থীর পরিবার অন্যায় করেছেন। আমরা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী ও অসুস্থ শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। এটি ভুল বোঝাবোঝি। গুরুতর কোনো বিষয় না।

রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম সরদার জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।