রাবি শিক্ষার্থী পরিচয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা
অনলাইনে এক প্রতারক চক্রের জালে আটকা পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান। এই প্রতারণার মাধ্যমে ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি নিজেই। ভুক্তভোগী মুশফিকুর রহমান রাবির ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাসা রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ আমি এক ভয়াবহ এবং চরম নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতাকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে এসেছি। গত কয়েক মাস ধরে আমি এবং আমার পরিবার এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র, অনাবাসিক হল কার্ডের পেছনের অংশের ছবি এবং ব্যক্তিগত ৪-৫টি ছবি চুরি করে ব্যবহার করছে। এই চক্রটি সোশ্যাল মিডিয়ায় (বিশেষ করে ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং হোয়াটসঅ্যাপ) আমার নামে ভুয়া প্রোফাইল খুলে ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচার প্রতারণা চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন প্রবাসীসহ দেশের ভেতরে থাকা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রতারণার মাধ্যমে তারা ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত আমি, কারণ তারা আমার পরিচয় ব্যবহার করছে। ভুক্তভোগীরা যখন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তখন তারা সরাসরি আমার ওপর ক্ষোভপ্রকাশ করছেন। আমাকে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক মনে করছেন। ফলে আমি প্রতিনিয়ত হুমকি, গালাগালি, প্রাণনাশের ভয় এবং সামাজিক অপমানের শিকার হচ্ছি। গত ৮ অক্টোবর ক্যাম্পাসে প্রথম জানতে পারি, আমার পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারকচক্র এক প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ওই প্রবাসী ভাই আমার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং প্রথমবারের মতো আমি পুরো ঘটনাটি জানতে পারি।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বিভাগের একজন শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করি। তার পরামর্শে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে যোগাযোগ করি। পর দিন ৯ অক্টোবর মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। পরবর্তীতে রাজশাহী র্যাব-৫ অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করি।
প্রতারকচক্রের কারণে যাতে কেউ প্রতারিত না হয়, সেজন্য আমি দ্রুত আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি সতর্কীকরণ পোস্ট দেই। সেখানে আমি স্পষ্টভাবে জানাই যে, ‘আমার পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনা-বেচা বা আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাব দেয়, তা যেন বিশ্বাস না করেন এবং যে কোন প্রকার লেনদেন থেকে বিরত থাকেন।’ কিন্তু দুঃখজনকভাবে, দুই দিনের মধ্যেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপে ‘সমাসুদ’ নামের আরো এক ব্যক্তি আমার পরিচয় উল্লেখ করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেন। তারপর, একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে এবং অনেকে আমার বাসায় এসেও হুমকি দিতে শুরু করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঘটনাটি শুধু আর্থিক প্রতারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এখন আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সামাজিক সম্মান, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক শান্তির ওপর সরাসরি আঘাত করেছে। প্রতারিত ব্যক্তিরা আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন, মেসেজে গালাগালি করেছেন, এমনকি রাজশাহীতে আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।
আমি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, আমি কখনো কোনো সময়, কোনো অবস্থায় ডলার কেনা-বেচা বা অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। বরং আমি নিজেই প্রতারকচক্রের একটি ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের শিকার।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘অনেক দিন আগে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বেশ কয়েকটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে এখনো যেহেতু সমাধান হয়নি, আমি এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলে দেখি, কিছু করা যায় কিনা।’
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। সাইবারে বিষয়টা পাঠানোর কথা। তবে বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।