ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, খেপলেন তারকারা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মিরপুরে গুলিতে বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অভিনেতা ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি করেন নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী।
এদিকে, ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই খেপেছেন ভক্ত থেকে শুরু করে শোবিজের তারকারা। তাদের দাবি- চব্বিশের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন এই অভিনেতা। প্রমাণ হিসেবে ইরেশ যাকেরের ফেসবুকের ‘লাল’ রঙের ছবি শেয়ার করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে থাকার পরও কেন এই অভিনেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা- জানতে চেয়েছেন নেটিজেনরা।
ইরেশের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘ইরেশ যাকের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আর তার বিরুদ্ধে কিনা জুলাই হত্যা মামলা!’
নির্মাতা আশফাক নিপুণের কথায়, ‘অগাস্ট মাসের ১ তারিখ ফার্মগেটে আমার সাথে, আমাদের অনেকের সাথে পুরোটা সময় ইরেশ যাকের এবং তার স্ত্রী দাঁড়িয়েছিলেন জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। উনার এবং আমাদের অনেক সহকর্মী একই সময় বিটিভি ভবনে শোক প্রকাশ করতে গেলেও, উনি সেখানে যান নাই।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এ ধরনের গায়েবি মামলা যে জুলাই গণহত্যার মূল আসামিদের পরিত্রাণের পথই সুগম করে দেয়, সেই দিকটি মনে করিয়ে দিয়ে এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘উনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, হোক কিন্তু উনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিতান্তই হাস্যকর। এ রকম গায়েবি মামলায় আসামি করতে গিয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সত্যিকার আসামিদের পরিত্রাণের পথ যে সুগম করে দেওয়ার পাঁয়তারা হচ্ছে। সেই বিষয়ে সাবধান হন সরকার।’
প্রতিবাদ জানিয়েছে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনও। লিখেছেন, ‘আমি এখন জীবনের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমি সঙ্গে সঙ্গেই সব কিছুর প্রতিক্রিয়া দেখাই না। তবে কখনও কখনও নীরবতা যেন বিশ্বাসঘাতকতার মতো মনে হয়। ইরেশ সবসময় সত্যের পক্ষে থেকেছেন। ছাত্রদের সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে, প্রতিটি সংগ্রামের মুহূর্তে তিনি ছিলেন। ৪ আগস্ট, যখন কারফিউ ঘোষণা করা হয়, আমরা শাহবাগে একসঙ্গে ছিলাম। সব বিপদের মাঝেও তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে আমি যেন নিরাপদে কালশী ফ্লাইওভারে পৌঁছাতে পারি- এমন এক সময়ে যখন যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারত, তিনি বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন।’
সেদিন রাতের ঘটনা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘সেই রাতে, গণভবনে যাওয়ার জন্য আমাদের উপর প্রচণ্ড চাপ ছিল। তবে ইরেশ যাকের দৃঢ়ভাবে না বলেছিলেন। তিনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্রদের পাশে, সত্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। আজ যখন দেখি তাকে হয়রানি করা হচ্ছে, তখন হৃদয় ভেঙে যায়। যদিও এটা আমাদের জন্য নতুন নয়- আমরা আগেও দেখেছি যারা সাহস করে দাঁড়িয়েছে, তাদের এভাবে দমন করা হয়েছে। তবুও এখন, যখন আমরা ভেবেছিলাম আমরা একটি ভালো, নিরাপদ দেশ গড়ে তুলছি, তখন এটা আরও বেশি কষ্টের এবং হতাশাজনক। যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়, তাদের রক্ষা করা উচিত, নিপীড়ন নয়। আমরা ইরেশের পাশে আছি। আমরা তাদের পাশেই আছি, যারা কখনও আশা ছাড়েনি।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির সিইও, প্রযোজক-নির্মাতা রেদওয়ান রনি লিখেছেন, ‘যিনি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তার বিরুদ্ধেই জুলাই হত্যা মামলা! লজ্জাজনক তো বটেই, তবে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এতে জুলাই হত্যা মামলাগুলোকে খেলনা ও মূল অপরাধীদের আড়াল করার ষড়যন্ত্রটা চোখের আড়ালে থেকে যায়। জুলাই আন্দোলন যখন থেকে শুরু হয়, তখন থেকেই সক্রিয় ছিলেন ইরেশ যাকের। আগস্টের ১ তারিখ শিল্পী-নির্মাতা-কলাকুশলীরা সংসদ ভবনের সামনে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়, পরে আমরা সবাই ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে দাঁড়াই, সেই মিছিলে ইরেশ ভাই ও মীম ছিল, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, মাইমুন খান একসাথেই দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টির মধ্যে। যিনি পরিবারের প্রায় সবাইকে নিয়ে রাজপথে নেমে গিয়েছিল তার বিরুদ্ধে এই মামলা হেলাফেলা করে দেখার বিষয় না। আন্দোলনে মূল অপরাধীদের কেউ হালকা করে ফেলার জন্য এবং হত্যা মামলাগুলোকে বিতর্কিত করার জন্যই এগুলো করা হচ্ছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে এই প্রযোজক-নির্মাতা বলেন, ‘সরকারকে আরও সতর্ক হয়ে মামলাগুলোর উদ্দেশ্য সফল করতে হবে, অবিলম্বে মূল অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনো না কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো সরকারের আমলে সরকারের সাথে কাজ করবে, ইভেন্ট করবে, নানান কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু এতে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটার সঠিক তদন্ত করে অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচার ব্যবস্থায় তার শাস্তি যেন নিশ্চিত হয় এটা সব সরকারের আমলেই কাম্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনের শাসন। কিন্তু মনগড়া ঢালাও হত্যা মামলা খুবই হতাশাজনক! এই সরকারের কাছে একটাই চাওয়া আবারও যেন ভিন্ন ফর্মে ফ্যাসিবাদের চাষ শুরু না হয়, দ্রুত পদক্ষেপ কাম্য।’