সীমান্তে সেনাদের টানা তিন রাত গোলাগুলি পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা

আমাদের সময় ডেস্ক
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সীমান্তে সেনাদের টানা তিন রাত গোলাগুলি পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছেই। টানা তিন রাতে সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী রবিবার দাবি করে, নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে গুলি ছুড়েছেন। জবাবে ভারতীয় সেনারা পাল্টা গুলি ছুড়েছেন।

পেহেলগামে গত মঙ্গলবার সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলাকারীদের খুঁজতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে। ভারতীয় পুলিশের দাবি, পলাতক বন্দুকধারীদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক।

এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আরব সাগরে নিজেদের জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালিয়েছে ভারত। দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নির্ভুল হামলার কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করতে এই মহড়া চালানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর হামলার পর এই মহড়ার মাধ্যমে ভারত হয়তো তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে (পাকিস্তান) কোনো বার্তা দিতে চাচ্ছে। মহড়ার পর দেশটির নৌবাহিনী জানিয়েছে, তারা জাতির সামুদ্রিক স্বার্থরক্ষায় ‘যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায়, যে কোনো উপায়ে’ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

ভারতেরই আরেক গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতকে ঘায়েল করতে ১৩০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে পাকিস্তান। তবে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য, পেহেলগাম হামলার পর দুই দেশই পরস্পরকে জবাব ও পাল্টা জবাবের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে।

হামলার দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে ছিলেন। তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। ফিরেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে দিল্লি। তিনি গতকাল আবার কঠোর শাস্তির কথা বলেছেন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গি হামলার কঠোর জবাব দেবে ভারত। আমার বিশ্বাস পেহেলগামের ঘটনা দেখে প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের একতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি নিহতদের পরিবারকে ফের একবার আশ্বস্ত করতে চাই যে, ন্যায় মিলবেই। ষড়যন্ত্রকারী এবং হামলাকারীদের কঠোর জবাব দেওয়া হবেই।’

শুধু ভারত নয়, পেহেলগামে হামলার পর দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক ও অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানশাসিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফারাবাদের জেলা প্রশাসনের এক মুখপাত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, ভারত ঝিলাম নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছাড়ছে। এতে সেখানে হঠাৎ করে মাঝারি বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ঝিলাম ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী। পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু নদের পানি চুক্ত স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। দেশটি হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানকে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না। অপরদিকে পাকিস্তান বলেছে, সিন্ধুর প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা করা হলে এটিকে তারা যুদ্ধের কাজ হিসেবে বিবেচনা করবে। আর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতিসংঘ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে, যেন গঠনমূলক পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা সম্ভব হয়।