নিষেধাজ্ঞার খড়্গে হৃদয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নিষেধাজ্ঞার খড়্গে হৃদয়

তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে তোলপাড় চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। তামিম ইকবাল ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান দলের অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড বাহুতে পরার পর থেকেই ‘মেজাজ’ ঠিক রাখতে পারছেন না তাওহিদ! মাঠে একাধিকবার আম্পায়ারের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন তিনি। এতে শাস্তিও পেতে হয়েছে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার সিক্সে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে মেজাজ হারান তাওহিদ। গত শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে গাজী গ্রুপকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মোহামেডান। ওই ম্যাচে ৪ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামেন তাওহিদ। ব্যাটিংয়ে আউট হওয়ার সময় তাকে অসন্তোষ প্রকাশ করে কিছু একটা বলতে দেখা যায়। লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকের বলে ড্রাইভ করার চেষ্টায় ঠিকমতো বল খেলতে পারেননি তাওহিদ। বল কিপারের গ্লাভসে লেগে উড়ে যায় পয়েন্ট ফিল্ডার শেখ পারভেজ জীবনের হাতে। আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। ব্যক্তিগত ৩৭ রানে আউট হন তাওহিদ।

আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে দুই হাত প্রসারিত করে প্রতিক্রিয়া দেখান মোহামেডান অধিনায়ক; মাঠ ছাড়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ পিচে দাঁড়িয়ে থাকেন, যা শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। মাঠের আম্পায়ার মনিরুজ্জামান টিংকু ও আলী আরমান রাজন, তৃতীয় আম্পায়ার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং চতুর্থ আম্পায়ার এটিএম ইকরাম যৌথভাবে এই অভিযোগ আনেন।

তাওহিদ অভিযোগ অস্বীকার করে পূর্ণাঙ্গ শৃঙ্খলাবিষয়ক শুনানিতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তবে পূর্ববর্তী যোগাযোগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে আম্পায়ারদের ড্রেসিংরুমে অনুষ্ঠিত শুনানিতে উপস্থিত হননি তিনি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের টেকনিক্যাল কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্তে তাওহিদ হৃদয়ের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছে।

গতকাল বিসিবির পাঠানো সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আচরণবিধির ধারা ৫.২.৬ অনুযায়ী, ম্যাচ রেফারি আখতার আহমাদ শুনানি ছাড়া বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন এবং তাওহিদকে একটি ডিমেরিট পয়েন্টের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আচরণবিধির ২.৮ ধারার অধীনে ম্যাচ চলাকালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ সংক্রান্ত লেভেল-১ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, লেভেল-১ অপরাধের শাস্তি হিসেবে সর্বনিম্ন সতর্কবার্তা এবং সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বা দুই ডিমেরিট পয়েন্ট প্রযোজ্য। সর্বশেষ এক ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ হওয়ার ফলে হৃদয়ের মোট ডিমেরিট পয়েন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮, যার মধ্যে ৭ ডিমেরিট পয়েন্ট পূর্ববর্তী অপরাধ থেকে সঞ্চিত। এই কারণে নতুন করে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। যেহেতু আগেই একটি ম্যাচ নিষিদ্ধ ছিলেন, সেই কারনে তাওহিদের ম্যাচ নিষিদ্ধের সংখ্যাটা দাঁড়ালো পাঁচে। আগামীকাল আবাহনীর বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগের অলিখিত ফাইনাল ম্যাচ থেকেই এ শাস্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল ছাড়াও বিসিবি আয়োজিত পরবর্তী চারটি সাদা বলের ম্যাচও তিনি খেলতে পারবেন না।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বের খেলায় আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তাওহিদ। ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আম্পায়ারদের নিয়ে মন্তব্য করায় সেই নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে করা হয় দুই ম্যাচ। এরপর নিষেধাজ্ঞা কমানো আবার বাড়ানো নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি।

সর্বশেষ তাওহিদ হৃদয় ইস্যুতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে গত শুক্রবার বৈঠক করেন তামিম ইকবাল। ওই দিনই রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, শুরুতে ঘোষিত তাওহিদের দুই ম্যাচের শাস্তিই বহাল থাকবে, তবে তা পিছিয়ে যাবে এক বছরের জন্য। এ ঘটনার পরের দিনই গত শনিবার আম্পায়ারের সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় ফের শাস্তি পেলেন তাওহিদ।

আরও পড়ুন:

বিপাকে আলভেস