ব্যাটারি রিকশাচালকরা উদ্ধত, মারমুখী
গুলশান-বনানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনে এসে মারমুখী আচারণ করেছেন চালকরা। এ সময় প্যাডেলচালিত রিকশা ও মোটরসাইকেলের চালক, সাংবাদিকদের মারধর করেন তারা। এমনকি দুটি প্যাডেলচালিত রিকশা খালে ফেলে দেন তারা। এ ছাড়া পথচারী ও ব্যবসায়ীদের ওপরও চড়াও হন তারা। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সড়ক ছাড়েন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), গুলশান সোসাইটি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ সিদ্ধান্তে গুলশানে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয় গত শনিবার। এ নিয়ে চালকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর প্রতিবাদে গত শনিবার ও রবিবার তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করলেও গতকাল পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
গতকাল সকাল থেকেই গুলশান-বনানীর বিভিন্ন সড়কে ও আশপাশের প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে চলাচলে বিঘœ ঘটানোর চেষ্টা করেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা। এর ফলে স্থানীয় জনতা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, দুপুরে ব্যাটারি রিকশার চালকরা বনানীর ১১ নম্বর সড়কে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় সেখানে অবস্থান করা প্যাডেলচালিত রিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে বাগ্বিত-া হয় এবং লাঠি দিয়ে বেধরক পেটান তারা। শুধু তা-ই নয়, কুটনীতিকপাড়ায় আসা বিদেশি, এমনকি ছবি তুলতে বা ভিডিও ধারণ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের কাউকেই রেহাই দেননি উত্তেজিত চালকরা। সবাইকেই ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবাদস্বরূপ তারা দুটি প্যাডেলচালিত রিকশা গুলশান লেকে ফেলে দেন। একটি রিকশা ফেলে দেওয়া হয় বনানী ১১ নম্বর ব্রিজ থেকে। আরেকটি রিকশা ফেলা হয় ব্রিজের পাশ থেকে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সকালের দিকে কিছু বিক্ষুব্ধ রিকশাচালক এসে যেখানে প্যাডেলচালিত রিকশার চালকদের যেখানে পেয়েছেন সেখানেই তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় আশপাশে থাকা বাইকার এমন কি পথচারী বাধা দিলে তাদেরও মারধর করে ব্যাটারি রিকশার চালকরা। সেনাবাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপে বিকালে সড়ক ত্যাগ করে তারা।
চালকদের দাবি- রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো গুলশান-বনানীতেও তাদের চলাচলের সুযোগ থাকা উচিত। তারা চাইছেন, নিয়মের আওতায় এনে তাদেরকে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হোক, যাতে কর্মসংস্থানের পথটি বন্ধ না হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে গুলশান সোসাইটি ঘোষণা করে- সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না; কিন্তু সোসাইটির এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি রিকশাচালকরা। তারা ঘোষণার পর থেকেই গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। সোমবার সোসাইটির বাসিন্দারা গুলশানের শেষ মাথায় এবং বনানী এলাকার শুরুর রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করছিলেন। এতে চালকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা বনানী ১১ নম্বর এলাকায় আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় তাদের আন্দোলনের ভিডিও এবং ছবি যারাই তুলতে যান তাদেরই লাঠিপেটা করেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. জিয়াউর রহমান জানান, বাইরের রিকশা প্রবেশ ঠেকাতে ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় পুলিশের ক্রাইম বিভাগের একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকানোর সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে ব্যাটারিচালিত ও প্যাডেলচালিত দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা অনেক পথচারী ও মোটরসাইকেল চালককে আঘাত করে।
বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) একেএম মইনুদ্দিন বলেন, গুলশান সোসাইটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢুকতে না দেওয়ায় সকাল থেকে চালকরা বিচ্ছিন্নভাবে জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব দেখা যায়। তারা প্যাডেলচালিত রিকশা দেখলে হামলা করার চেষ্টা করছিল। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ এপ্রিল থেকে গুলশানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়। এর আগে শুধু নির্দিষ্ট রঙের ও নিবন্ধিত প্যাডেলচালিত রিকশা চলতে পারত গুলশানে। তবে কয়েক মাস ধরে বাইরের ব্যাটারিচালিত রিকশা এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করলে যানজট ও বিশৃঙ্খলা বাড়ে বলে স্থানীয়রা জানান। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), গুলশান সোসাইটি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যৌথভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।