উত্তর প্রদেশে নারীর হিজাব টেনে হয়রানি, ভিডিও ভাইরাল
ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক নারীর হিজাব খুলে নিগ্রহ করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নিজের এলাকাতেই নিগ্রহের শিকার হন ওই তরুণী। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
চলতি সপ্তাহে মুজাফফরনগরের একটি জনবহুল এলাকা দর্জিওয়ালা গলিতে ঘটনাটি ঘটে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, এক তরুণীকে ঘিরে ধরেছে কয়েকজন। তারা তরুণীকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের মন্তব্য করছে। ঘেরাটোপের মধ্যে পড়ে অসহায় নারী আর্তনাদ করছেন। অল্পবিস্তর ধাক্কাধাক্কি চলছে। তাদের কয়েকজন ঘটনাটি মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করে।
সেই সময়ে দেখা যায় ভিড়ের মধ্যে থাকা এক ব্যক্তি ওই নারীর মাথা থেকে হিজাব টেনে খুলে দিচ্ছে। ভিড়ের আক্রমণের সামনে বিশেষ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি তরুণী। তাকে বাঁচাতেও কেউ এগিয়ে আসেননি।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত সেই এলাকায় আসে। থানায় তরুণীর দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেখান থেকে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
আটককৃতদের নাম সরতাজ, শাদাব, উমর, আর্শ, শোয়েব ও শামি। তরুণী অভিযোগ জানানোর পরে সকলের পরিচয় সামনে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ বছর বয়সি ওই তরুণী স্থানীয় খালপাড় এলাকার বাসিন্দা। শচীন নামে এক যুবকের সঙ্গে তিনি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন।
নিগ্রহের শিকার নারীর মা একটি ব্যাংকে কাজ করেন। যুবক সেই ব্যাংকেরই কর্মী। ঋণ সংক্রান্ত কোনো একটি কাজে শচীনের সঙ্গে তার মেয়েকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই নারী। শচীন তাকে মোটরবাইকে করে নিয়ে যান। এরপরই তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৭ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগেও এ রাজ্যে মুসলমানদের উপর আক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। ২০১৫ সালে দাদরিতে মোহাম্মদ আখলাকের হত্যা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আখলাকের কাছে গোমাংস আছে, এই অভিযোগ তুলে একদল দুষ্কৃতী বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে দেখা যায় আখলাকের বাড়িতে আদৌ গোমাংস ছিল না। যোগী ক্ষমতায় আসার পর বার বার সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ তনভীর নাসরিন বলেন, ‘এই ঘটনায় নিগৃহীতা ও নিগ্রহকারী উভয়ই মুসলমান ধর্মাবলম্বী। যারা নিগ্রহ করেছে তারা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ হলে আমরাই ঘটনার একটা ভিন্ন অর্থ খোঁজার চেষ্টা করতাম। এর দুটো দিক আছে। এর মধ্যে একটি অবশ্যই সাম্প্রদায়িক। নিগ্রহকারীরা ওই তরুণীর প্রতিবেশী। অন্য ধর্মের তরুণ সঙ্গে থাকায় তারা কোন প্রণয়ঘটিত সম্পর্কের কথা অনুমান করেছে। তাই মেয়েটির উপর চড়াও হয়েছে। এটা খুবই ঘৃণ্য ব্যাপার।’
তার মতে, ‘এতে শুধু সম্প্রদায় নয়, সার্বিকভাবে নারীর প্রতি হীন মানসিকতা প্রকাশিত হয়েছে। এখানে মেয়েটিকে নিশানা করা হয়েছে। তার সম্প্রদায় মনে করছে, তরুণী কী করবেন, আচরণ কী হবে, সেটা তার সম্প্রদায়ের পিতৃতান্ত্রিক কর্তারা নির্ধারণ করে দেবে। তরুণী কোন প্রয়োজনে, কার সঙ্গে কোথায় গিয়েছিলেন, সেজন্য অন্য কারো কাছে জবাব দিতে তিনি বাধ্য নন। ভারতে আইন আছে, সমাজে শৃঙ্খলা রয়েছে। সে সবকিছুকে অতিক্রম করে কয়েকজন পুরুষ একটি নিরপরাধ মেয়েকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করছে, এটা অত্যন্ত নিন্দাজনক।’