প্রধান উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মৎস্য কার্যালয়ের অফিস সহকারী মাহবুব আলম সুমনের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীরা সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমানের কাছে পৃথকভাবে কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মৎস্য কার্যালয়ের অফিস সহকারী মাহবুব আলম সুমন জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রত্যেক দরিদ্র অসহায়দের নগদ দুই লাখ টাকা দিবে। এর জন্য দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য তাকে ছয় হাজার টাকা দিতে হবে।
শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে জন প্রতি ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন একটি করে ম্যাসেজ। ওই ম্যাসেজে লেখা হয়েছে, আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা জমা হয়েছে। পরে ভুক্তভোগীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই ব্যাংকে তাদের কোনো একাউন্ট নেই। যে মোবাইল নম্বর দিয়ে মেসেজ দেওয়া হয়েছে সেটাও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নয়। এভাবে তিনি একটি ইউনিয়ন থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় দশ লাখ টাকা। এমন করে বিভিন্ন ইউনিয়ন মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
আরেকটি পৃথক অভিযোগ থেকে জানা যায়, পাঁচ লাখ টাকার সরকারি ঘর দিবে বলে জনপ্রতি নিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। গরু দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন জনপ্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা। একই সঙ্গে মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতার জন্য নিয়েছেন জনপ্রতি পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা।
নাজিরপুর গ্রামের ভুক্তভোগী জনি মিয়া বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ঘর, টিউবওয়েল, ভাতা ও গরু দেওয়ার কথা বলে মাহবুব আলম সুমন মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। আমি তাকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
সনমান্দী ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী তাছলিমা বেগম জানান, আমিসহ আমাদের এলাকার অনেকের থেকেই বাড়ি ও গাভী গরু দিবে বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে পঁচিশ হাজার করে টাকা নেয়। এখন অফিসে গিয়ে জানতে পেরেছি তিনি প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে আমরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাহাবুব আলম সুমনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, ভুক্তভোগীরা আগেও একাধিকবার অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। সুমনকে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে একবার এবং কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় তিনবার শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে রমজান মাস থেকেই অফিসে আবার অনুপস্থিত। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’