নববর্ষের শোভাযাত্রায় ডিসি-এসপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:০৭
শেয়ার :
নববর্ষের শোভাযাত্রায় ডিসি-এসপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা

কুষ্টিয়ায় নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। আজ সোমবার সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হওয়া আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ায় তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।

আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। তিনি কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কুষ্টিয়া বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হয়ে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন পলাতক।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে হত্যঅ মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করায় রাজনৈতিক ও সাধারণ মহলে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন নেটিজেনরা। জেলা প্রশাসক মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম শোভাযাত্রায় উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নানা আয়োজন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। মজমপুরগেটসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে বনবীথিতে এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের আনন্দ শোভাযাত্রায় ব্যানার ধরে সামনের সারিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেমকে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোকারম হোসেন ৫ আগস্ট কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তামজিদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত ৪২ নম্বর আসামি। ওই মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও আরও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। 

মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম প্রথমে মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজ সকালে জেলা প্রশাসনের বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলাম। ’ হত্যাচেষ্টা মামলার প্রমাণ রয়েছে জানালে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে চান। তার ছবি দিয়ে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সুলতান মারুফ তালহা বলেন, ‘একজন জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমি বলব, যারাই ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের নিয়ে পথ চলবে, তারাই নিন্দনীয় হবে। সে, আমি হই, ডিসি হন, বিএনপি হোক আর জামায়াত হোক।’

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিষয়টা অতন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে সর্তক থাকা উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলব। আমি বুঝতে পারি না ফ্যাসিষ্টের দোসরা প্রশাসনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সাহস পায় কী ভাবে?’

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘এমনটা কেন হলো। ব্যাপারটি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব। ’

পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোনোভাবেই আমি কিছু জানি না। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি তাকে চিনি না। খেয়ালও করিনি। তিনি মামলার আসামি হলে আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলব।’