চারুকলায় মোটিফে আগুন দেওয়া যুবক ঢাবি ছাত্র!

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
চারুকলায় মোটিফে আগুন দেওয়া যুবক ঢাবি ছাত্র!

নববর্ষের শোভাযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলায় বানানো ফ্যাসিবাদের মোটিফে আগুন দেওয়া সেই যুবককে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ওই যুবক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র বলেও তথ্য এসেছে। তবে বিষয়টি গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি পুলিশের তদন্তকারী দল। গতকাল সকালে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের জানান, শোভাযাত্রার আগেই ওই দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

এদিকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার সবচেয়ে বড় মোটিফ ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়ায় সেটি আবারও তৈরি হচ্ছে। এক দিনের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে কাজটি এগিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। তারা চেষ্টা করছে, সফল হতে পারবে কি না বলতে পারছি না। ১০ থেকে ১২ দিনের কাজ এক দিনে করা প্রায় অসম্ভব।

এর আগে ঘটনার রাতেই চারুকলার প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পরিদর্শনকালে ঢাবির চারুকলা অনুষদে নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’ পুনরায় নির্মাণের দায়িত্ব শিল্পীদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে বলে জানান ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান। জানা গেছে, ওই প্রতিকৃতি পুনরায় সম্পন্ন করা হলে আনন্দ শোভাযাত্রার অগ্রভাগে স্থান দিয়ে ফ্যাসিবাদের ধিক্কার জানানো হবে।

গত শনিবার ভোরে দুর্বৃত্তের আগুনে ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতিটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় শান্তির পায়রা মোটিফও। চারুকলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে মাস্ক পরা এক যুবক দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় ওইদিন শাহবাগ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

অন্যদিকে ঢাবির আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেওয়া ব?্যক্তির নাম রবিউল ইসলাম রাকিব। তিনি ঢাবির আরবি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আগে তিনি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। আগুন দেওয়ার ওই ভিডিও রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তদন্তকারীরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেনি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওই যুবক থাকতেন মাস্টার দা সূর্যসেন হলে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে আর হলে দেখা যায়নি।

আরবি বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ বলেন, আমরা সবাই তাকে ভিডিও দেখে চিনতে পেরেছি। সে কয়েক দিন আগে বিজয় ৭১ হলের সামনে এসে ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়ে গেছে। তার ফেসবুক কমেন্ট, পোস্ট এখনও আক্রমণাত্মক। আরবি বিভাগের যে শিক্ষার্থীর নাম তার সহপাঠীরা বলছেন, তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদের কাছে এ বিষয়ে চাইলে বলেন, আমাদেরও মনে হয়েছে ওই ছেলে হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এখন তদন্ত চলছে।

সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন বলেন, এক যুবক দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে আগুন লাগিয়ে একইভাবে চলে যায়। আমরা সিসি ক্যামেরা ফুটেজে একজনকেই দেখেছি। আমাদের দুই তিনটা ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। তার পরনে ছিল কালো রঙের টি-শার্ট এবং মুখে মাস্ক ছিল। পুরো ঘটনাটি ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে মনে হয়েছে।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রবিবার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে চারুকলার ঘটনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অত্যন্ত ক্লোজ। খুব নিকটে পৌঁছে গেছি ডিটেকশনের ক্ষেত্রে। আশা করছি সোমবার সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা শুরুর আগেই সন্তোষজনক পর্যায়ে ডিটেকশনের ক্ষেত্রে চলে যাব। সম্ভব যদি হয়, এই সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।

পুলিশ যাকে সন্দেহ করছে, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ওই শিক্ষার্থী কি না জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, এখন পর্যন্ত তার পরিচয়ের বিষয়টি আমরা কনফার্ম না। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। ওই যুবক গ্রেপ্তার হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মোটামুটি সাসপেক্টের মধ্যেই আছি। এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছু পাইনি। কাউকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি।