উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

আবু আলী
১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

তীব্র আপত্তির পরও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর পুরনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করবে না। বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণও হবে না। দেশে নতুন কোনো শিল্প গড়ে উঠবে না। এমনিতেই রপ্তানি খাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে, নতুন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক খাতে নতুন করে আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। ফলে আর্থিক খাতে চাপ পড়বে। কারণ, আমদানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি লাগবে। গ্যাসের দাম বাড়ালে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে, তখন মন্দ ঋণ বাড়বে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জ্বালানির দামে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের উৎপাদনমুখী শিল্প খাত চরম চাপের মধ্যে পড়বে। তারা আরও জানান, বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। কিন্তু সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎপাদন খরচ আরও বাড়িয়ে দিল। ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও ঝুঁকিতে পড়বে।

ঢাকা চেম্বার মনে করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ব্যবসার খরচ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নতুন শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা কমবে এবং বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনায় বাধার সৃষ্টি হবে। ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পের

বিশেষ করে তৈরি পোশাক, সিরামিক ও স্টিল উৎপাদন খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে; এসব খাত গ্যাসনির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ, তারা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে সক্ষম নয়। যদিও সরকার রাজস্ব বাড়ানোর স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবু শিল্প খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সময়োপযোগী নীতি সহায়তা প্রয়োজন। একই সঙ্গে জ্বালানির মূল্য প্রেডিকটেবল রাখতে রপ্তানিকারক দেশগুলোর সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিল্প ও ভোক্তাদের ওপর চাপ কমানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিল্পায়নকে নিরুৎসাহিত করবে। শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। বর্ধিত মূল্যে নতুন বিনিয়োগকারীর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। সরকার একদিকে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছে, আবার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, এর আগে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। শিল্প ও ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম করা হয় ৩০ টাকা। গত বছর ক্যাপটিভে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩১.৫০ টাকা। কিন্তু দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস সংকট কাটেনি।

বর্তমানে দেশে গ্যাসের দিনে অনুমোদিত লোড ৫৩৫ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে দিনে ৩৮০ থেকে ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ২৮০ থেকে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এতে ঘাটতি থাকছে দিনে ১০০ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট।

এই সিদ্ধান্তে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) বলেছে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না করে ফের দাম বৃদ্ধি শিল্প খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।