বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতিপত্রে শেখ মুজিবের ছবি

রংপুর প্রতিনিধি
১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৫২
শেয়ার :
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতিপত্রে শেখ মুজিবের ছবি

‎রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতিপত্রে মুজিববর্ষের লোগো ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

‎‎বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে কবি হেয়াত মাহমুদ ভবনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরীক্ষার রিজার্ভ ডিউটির তালিকায় দেখা যায়, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন ও নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. আপেল মাহমুদসহ পাঁচ শিক্ষকের উপস্থিতির তালিকায় শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর লোগো রয়েছে। বিষয়টি শিক্ষকদের নজরে এলে সমালোচনা শুরু হয়। পরে সঙ্গে সঙ্গেই তালিকাটি সরিয়ে নেওয়া হয় এবং বাকি তিনটি ভবনের শিক্ষকদের ডিউটির তালিকায়ও বঙ্গবন্ধুর লোগো থাকায় সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।

‎‎তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ও ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে এখনো শেখ মুজিবের লোগো থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জুলাই আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বেরোবি কেন্দ্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত শিক্ষকদের রিজার্ভ ডিউটির তালিকা সব ভবনে সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, শেখ মুজিবের লোগো সংবলিত সবগুলো উপস্থিতিপত্রে শিক্ষকরা স্বাক্ষরও করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজে এখনো এ লোগো দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপিপন্থী কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা। অনতিবিলম্বে ওই উপস্থিতিপত্র বাতিল করারও দাবি জানান তারা।

‎‎বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন বেরোবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামীপন্থী নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. আপেল মাহমুদ। এর আগে তিনি আবু সাঈদ বইমেলা কমিটিতে থেকেও বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেন।

‎‎জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কট্টর আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. আপেল মাহমুদ ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসীন হলে ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েই ২০১৪ সালে নীল দল প্রতিষ্ঠা করে নিজেই সভাপতি হন। এরপর হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে রয়েছেন কার্যকরী সদস্য পদে। এ ছাড়া নীল দলের প্যানেলে থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ২০২৩ সালে জয়লাভও করেন তিনি।

‎‎এ বিষয়ে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, অনুষদে সিনিয়র শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও বারবার উপাচার্য বিতর্কিত আওয়ামীপন্থী শিক্ষক আপেলকেই দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পরীক্ষায়ও এ শিক্ষককে দায়িত্বে রাখা হতে পারে।

অধ্যাপক আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল শুধু যোগাযোগ করা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে টিম আসছে তাদের সঙ্গে থাকা। রাজশাহী টিমের যাবতীয় সব কিছু আমি দেখাশোনা করছি। তাদের নিরাপত্তা, কেন্দ্র ভিজিট, খাওয়া ইত্যাদি আমার দায়িত্ব ছিল। এখানে ফোকাল দায়িত্বে ছিলেন ফেরদৌস স্যার। এখানে কাজের সুবিধার জন্য কয়েকটি উপকমিটি করা হয়েছে।’

জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা রাখা ছাত্র শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনের জন্য যখন দলমত নির্বিশেষে কাজ করছে, তখনও পরাজিত শক্তি বিভিন্নভাবে সেটিকে প্রতীয়মান করে যাচ্ছে, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ।’ এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

‎‎অপরদিকে বেরোবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। কিন্তু তারপরও বেরোবি থেকে ফ্যাসিবাদ এবং তার দোসরদের দূর করতে পারিনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা প্রমোশন পাচ্ছে। প্রশাসন বারবার আওয়ামীপন্থীদের সুবিধা দেওয়ায় আমাদের মধ্যেও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। আমরা দলীয়ভাবে প্রশাসনকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্মারকলিপি দেব।’

‎‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকত আলী বলেন, ‘২৫টির অধিক শিক্ষক উপস্থিতিপত্রের শিট ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিটে মুজিবর্ষের লোগো ছিল না। কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষক উপস্থিতিপত্রের একটি মাত্র শিটে শেখ মুজিবের ছবি ও লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল। বিষয়টি জানার সঙ্গেই সেই শিট বাতিল করে নতুন শিটে উপস্থিতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কে যেন ইনটেনশনালি ছবি তুলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টা বাইরে ছড়িয়েছে। আমরা এখন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিষয়টির তদন্ত করছি। ফ্যাসিবাদী কোনো শিক্ষক এই ঘটনা সংঘটিত করেছে। এ ঘটনায় জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’