মাদ্রাসার ২ ছাত্রকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল
মাদ্রাসায় আসতে দেরি করায় দুই শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে লাঠি দিয়ে পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলায়পুর ইউনিয়নের বুধাই মাদবর কান্দি গ্রামের মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায়।
পেটানো ওই ব্যক্তির নাম ইয়াকুব খান। তিনি ওই মাদ্রাসার পরিচালক ইকবাল হোসেন খানের ছোট ভাই ও মালয়েশিয়া প্রবাসী। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হলেও মাদ্রাসা কৃর্তৃপক্ষ এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- নড়িয়া উপজেলা ভোজেশ্বর এলাকার মৃত রাজিব মোল্যার ছেলে রাইয়ান হোসেন (১১) এবং জাজিরা উপজেলার বিলাসপুরের মহরখান্দির সুমন মাদবরের ছেলে সামিউর রহমান (৯)।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া মারধরের ভিডিওটি ৩১ সেকেন্ডের। এতে দেখা যায়, মাদ্রাসার ভেতর লুঙ্গি ও শার্ট পরা এক ব্যক্তি কয়েকজন শিক্ষার্থীর সামনে দুইজনকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা ভয়ে অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের কথা না শুনে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন ওই ব্যক্তি।
ভিডিওটির সূত্র ধরে সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগে মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক ইকবাল হোসেন খানের ছোট ভাই ও মালয়েশিয়া প্রবাসী ইয়াকুব খান দেশে আসেন। নিয়মিত ওই মাদারাসা থাকা শুরু করেন। একসময় তিনিও মাদ্রাসায় পড়াতেন।
গত ঈদ-উল-ফিতরের আগের শুক্রবার মাদ্রাসায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ইফতার মাহফিলের কাজ করার জন্য সকল শিক্ষার্থীদের সকালে সকাল মাদ্রাসায় আসতে বলা হয়। কিন্তু মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সামিউর রহমান এবং তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রাইয়ান হোসেন দেরি করে আসায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাদ্রাসা পরিচালকের ভাই ইয়াকুব খান। তিনি হাতে লাঠি নিয়ে ওই দুই ছাত্রকে বেধড়ক পেটায়। এতে ওই দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। বিশেষ করে রাইয়ানের পায়ের হাটুর নিচে ফেটে যায়। ওই শিক্ষার্থীরা বাড়িতে তাদের মাকে বললে তারা (অভিভাবক) ভয়ে মাদ্রাসা আসেনি।
ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে ইয়াকুব মালয়েশিয়া চলে যায়। গতকাল শুক্রবার রাতে ৩১ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আহত শিক্ষার্থী রাইয়ান হোসেন ও সামিউর রহমান বলেন, আমাদেরকে ভোরে আসতে বলেছিল হুজুরের ভাই। আমদের আসতে দেরি হওয়ায় ইয়াকুব ভাই (মাদ্রাসা পরিচালকের ছোট ভাই) লাঠি দিয়ে পেটায়। হাত ধরার পরেও মাফ করে নাই।
এ বিষয়ে রাইয়ান হোসেনের মা রুবিনা আক্তার ও সামিউর রহমানের মা সোমা আক্তার বলেন, ‘ছেলেকে বেধড়ক মারছে। ব্যাথায় তাদের জ্বর হয়েছিল, ওষুধ খাওয়াইছি। আজ (শনিবার) আমাদের আসতে বলেছে হুজুর। আমরা গরিব মানুষ, এ ঘটনার বিচার চাই।
মাদ্রাসার পরিচালক ইকবাল হোসেন খান বলেন, আমার ছোট ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী। দুই মাস ধরে এখানে ছিল। আগেও এখানে শিক্ষকতা করতেন। আমাদের ভুল হয়েছে, মাফ করে দেন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।