চারুকলায় আগুনে পুড়ল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, থানায় জিডি

ঢাবি প্রতিবেদক
১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৯
শেয়ার :
চারুকলায় আগুনে পুড়ল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, থানায় জিডি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় নির্মিত মূল ছয়টি মোটিফের মধ্যে একটি দানবীয় ফ্যাসিবাদের প্রতীকী মুখাকৃতি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। পাশাপাশি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরেকটি মোটিফ শান্তির প্রতীক পায়রা।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ।

জানা যায়, ভোর আনুমানিক ৪টা ৫০ মিনিটে অনুষদের দক্ষিণ পার্শ্বের গেট সংলগ্ন জায়গায় স্থাপিত প্যান্ডেলের ভেতরে থাকা শোভাযাত্রার জন্য নির্মিত বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী মোটিফের মধ্যে দানবীয় ফ্যাসিস্টের প্রতীকী মোটিফ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিটিং ডেকেছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা কাউকে সন্দেহ করছি বিষয়টি এমনটিইও না। তা ছাড়া কাউকে সন্দেহ করার বলার মতো কোনো আলামত আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। এ নিয়ে তদন্ত হবে। মিটিং পরবর্তী কি সিদ্ধান্ত আসে, তা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তা ছাড়া ইতোমধ্যে থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে।’

এদিকে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘দুটি মোটিফ পুরোপুরি পোড়েনি। তবে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি পুরোপুরি পুড়েছে। শান্তির পায়রা কিছুটা পুড়েছে। এ নিয়ে আমরা আমরা মিটিংয়ে বসেছি, তদন্ত করব। একটু সময় প্রয়োজন, তারপর হয়ত আরও জানাতে পারব।’

দানবীয় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি: এবারের শোভাযাত্রায় বড় মোটিফ থাকছে ছয়টি জুলাই বিপ্লবোত্তর এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। যার ফলে পুরো শোভাযাত্রায় থাকছে ফ্যাসিবাদের নীরব প্রতিবাদ। জানা যায়, ইলিশ মাছ, বাঘ, পালকি, পাখি, মুগ্ধের পানির বোতল, স্বৈরাচারী শাসকের প্রতিবাদে অশুভ প্রতীকী দানবীয় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি এবার মূল মোটিফ রাখা হয়।

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি দেখতে অনেকটাই দেশের ক্ষমতাচ্যুত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেহারার সঙ্গে মিলে। এবারের শোভাযাত্রার প্রধান এই প্রতিকৃতিটি ফ্যাসিবাদের বীভৎস রূপ হিসেবে নির্মিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দাঁতাল মুখের এক নারীর মুখাবয়ব। মাথায় খাড়া চারটি শিং, হা করা বিকৃত মুখ, বিশাল আকৃতির নাক, ভয়ার্ত দুটো চোখ। 

ওই মোটিফ প্রসঙ্গে এর আগে গতকাল শুক্রবার চারুকলা অনুষদের ওসমান জামান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এটি একটি নির্বতনমূলক ব্যবস্থার একটি প্রতীকী মুখাবয়ব, এখন যদি কেউ নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দেখতে চায়, সেটি তার স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ এবং যদি প্রতীকী অর্থে দেখতে চায় সেটিও দেখতে পারে। একইভাবে পানির বোতলটিইও তাই, একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেও দেখতে পারেন এবং ওই সময়ের আবহ বোঝার জন্য যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে এবং পানি বিতরণ করা হচ্ছে যে, যেভাবে দেখে এটি শিল্পের বহিঃপ্রকাশ।’