দুদকের অভিযানের সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার, শিক্ষিকাকে শোকজ

রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
১১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:২২
শেয়ার :
দুদকের অভিযানের সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার, শিক্ষিকাকে শোকজ

মাদারীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার অভিযোগে এক শিক্ষিকাকে একইসঙ্গে দুই কর্মকর্তা শোকজ করেছেন। এক কর্মদিবসের মধ্যে ওই শিক্ষিকাকে ব্যাখ্যাও দিতে বলা হয়েছে শোকজ চিঠিতে। হুমকি দেয়া হয়েছে বিভাগীয় মামলারও। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে বইছে সমলোচনার ঝড়।

গত বুধবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলসান আরা এবং উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। পরে অফিসে ডেকে চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয় রাজৈর উপজেলার ৪২নং খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষ্মী বিশ্বাসকে। যদিও চিঠিতে স্বাক্ষর করা দুই শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই শোকজের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা।

জানা যায়, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ হয়। এরপর ওই শিক্ষকদের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়। পদায়ন করতে শিক্ষকদের কাছে থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনজুর রহমানের বিরুদ্ধে। একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত উপ-আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ ওঠে।

দুদক প্রধান কার্যালয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সকালে সেখানে অভিযানে যায় মাদারীপুর দুদকের ৭ সদস্যের একটি। যাচাইবাছাই করা হয় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র। এ সময় প্রশ্ন করলে রেগে যান অভিযুক্ত জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনজুর রহমান। দুদকের সঙ্গে জড়ান বাকবিতন্ডায়। তদন্ত শেষে রিপোর্টটি প্রধান কার্যালয়ের প্রদান করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।

দুই কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় যায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দুদুকের অভিযান। এই সংবাদটি সরাসরি প্রচার হয় একটি সংবাদ মাধ্যমে। এই সংবাদের লিংক শেয়ার করেন অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস। সরকারি কর্মচারী হিসেবে এই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা সরকারি কর্মচারী আচরণ আইন লঙ্ঘনের সামিল। এরইপ্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।

পাশাপাশি এক কর্মদিবসের মধ্যে চিঠির উত্তরও দিতে বলা হয়। উল্লেখ করা হয় ভাইরাল করতেই ওই সংবাদটি শেয়ার করা হয়েছে। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস জানান, এক শিক্ষা কর্মকর্তা তার ইনবক্সে সংবাদটি দিতে বলেন। তাকে পাঠাতে গিয়ে ভুলবশত সংবাদের লিংকটি ফেসবুকে শেয়ার হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক শেয়ার হওয়া লিংকটি কেটে ফেলি। কিন্তু বিষয়টি এতোদূর চলে যাবে বুঝতে পারিনি।

রাজৈর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই একদিনে আলাদা দুটি চিঠি করা হয়। ফেসবুকে শেয়ার করে ভাইরাল করার উদ্দেশ্যেই শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস এমনটা করেছেন। তার প্রাপ্ত জবাব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে রাজৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলসান আরা বলেন, শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস ফেসবুকে শেয়ার করে সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশেই কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নজরে আসলে লক্ষ্মী বিশ্বাসকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়। ওই শিক্ষিকার সঙ্গে অন্যায় কোন কাজ করা হবে না।

দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই এই শোকজ চিঠি করেছেন। একই সঙ্গে দুই কর্মকর্তা একই ফরমেটে চিঠিতে স্বাক্ষর করবেন এটা দুঃখজনক। এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে।