রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর রীতিমতো কাঁপছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশও আছে বাড়তি শুল্ক আরোপের তালিকায়। এর মধ্যেই পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত সরকার। এতে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, খরচ বৃদ্ধি ও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে আরেকটি ধাক্কা আসছে। গত মঙ্গলবার এই সুবিধা বাতিল করে নোটিশ জারি করে দেশটির সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)। গতকাল বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সোয়াল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এই সুবিধা বাতিলের কারণে এখন থেকে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না বাংলাদেশ। এই সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের রপ্তানি ব্যয় বাড়বে। লজিস্টিক যাবে দেরিতে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানের বাংলাদেশে সীমিত ট্রানজিট সুবিধা ব্যাহত হবে। কারণ, এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ব্যাহত হবে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির এই সুবিধা দিয়েছিল ভারত।
বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত দেশটির বন্দর ও বিমানবন্দরগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহনের ওপর প্রভাব ফেলবে, বাংলাদেশে রপ্তানি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের বাজারে। এই সুবিধা বাণিজ্য সহজতর করতে এবং খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ‘লজিস্টিক্যাল’ চাপ বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফারুক হাসান গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত মূলত ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে আমাদের সুতা আমদানি বন্ধ করার পাল্টা জবাব বলা যায়। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এয়ারে পণ্য পাঠাতে হলে বেনাপোল হয়ে কলকাতা থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করত। এ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় রপ্তানি খরচ বাড়বে। সময়ও বেশি লাগবে। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে, ভারত তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং উভয় দেশের জন্য উপকার হয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান আমাদের সময়কে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার জায়গা এমনিতেই পিছিয়ে রয়েছি। ভারতের এ ধরনের সিদ্ধান্তে আরেক ধাপ পিছিয়ে যাব। সহযোগিতা না থাকলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সভাপতি কবির আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে এতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে, কারণ আগে আমাদের অতিরিক্ত কার্গো ভারতীয় বিমানবন্দর দিয়ে যেত। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাফার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে। কারণ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিমানবন্দরও অতিরিক্ত কার্গোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যসম্ভার নিয়ে যাওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় পণ্য রপ্তানিতে সময় এবং খরচ উভয়ই বাড়বে, যা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই সুবিধা বাণিজ্য সহজতর করতে এবং খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য চাপ বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে এর প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সাময়িকভাবে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এটি খারাপ খবর। এ ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করা হবে।