রংপুরে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে

রংপুর প্রতিনিধি
০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৮
শেয়ার :
রংপুরে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার এক বাসের সুপারভাইজারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্ত্রীর পরকীয়া নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার বাধে। এরপর ঢাকার সাভার মডেল থানা স্ট্যান্ড এলাকার ভাড়া বাসায় শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে রংপুর নগরীতে নিজ বাড়িতে লাশ এনে তাড়াহুড়ো করে দাফন করেছেন স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শিউলি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ থানাধীন মহিন্দ্রা উত্তরপাড়া এলাকার মকবুল হোসেনের পুত্র শরিফুল (৩০) ঢাকার সাভার এলাকায় সুপারভাইজারের কাজ করতেন। পেশাগত কারণে ঢাকার সাভার মডেল থানা স্ট্যান্ড এলাকার আনন্দপুর ফকিরটারিতে বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছেন তিনি। গত রবিবার রাতে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকার সাভারে স্বামীর ভাড়া বাসায় যান স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শিউলি। সোমবার রাতে হঠাৎ শরিফুল মুঠোফোনে তার বোন রাণী বেগমকে জানান 'আমি বউয়ের এত নির্যাতন সহ্য করতে পারছি নাহ' বলেই ফোন কেটে দেন। তারপরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৫টায় হঠাৎ শরিফুলের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার শিউলি মুঠোফোনে রাণীকে জানায় শরিফুল আত্মহত্যা করেছেন। পরবর্তীতে সাভার থেকে গ্রামের বাড়িতে লাশ এসে পৌছলে গলায় স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন দেখে এলাকাবাসী মন্তব্য করেন, আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে শরিফুলকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানান, লাশ এনেই শরিফুলের বউ বলে ওড়না দিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শরিফুল। ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করলে গলায় কেন এত গভীর জখমের চিহ্ন? এলাকাবাসী এমন প্রশ্ন করলে নিজের কথা পাল্টিয়ে ফাতেমা আক্তার শিউলি জানান, ওড়না নয় রশি বেলকুনির জানালার গ্রিলে পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শরিফুল।

স্থানীয় মাহফুজার রহমান জানান, এই মহিলার (শরিফুলের স্ত্রী) অনেকদিন ধরেই পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। পরশুদিন ঈদের ছুটি শেষে এই মহিলা ঢাকা যাওয়ার পর স্বামীর হাতে পরকীয়া ধরা পড়ার ফলে গলায় চেইন পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে শরিফুলকে হত্যা করেছেন। এটা আত্মহত্যা নয়, হত্যা। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়।

এ বিষয়ে মরদেহ গোসলকারী মুয়াজ্জিন আহমদ আলী জানান, আমি ত্রিশটির ওপর মরদেহ গোসল করিয়েছি। জীবনে গলায় এমন আঘাত পাওয়া মরদেহ গোসল করাই নাই। যদি রশি কিংবা ওড়না দিয়ে ফাঁস দিত, তাহলে এমন জখম হতো না। এটা নিশ্চিত হত্যা। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা আঘাতের জায়গা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমরা এই মহিলার বিচার চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফাতেমা আক্তার শিউলি হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘গতকাল দুপুর বেলা আমাকে হঠাৎ এসে বলে তুই কার সঙ্গে ঘুরিস, কার সঙ্গে খাস, আমি সব জানি। এই বলে ঝগড়া শুরু করেন। আমি তাকে বলি, অযথা আমার নামে অভিযোগ দিবা না। যেদিন হাতেনাতে ধরবা, সেদিন বলবা। এরপর রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। রাতে এসে আবার ১টার দিকে ঝগড়া করে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। আমি বলেছি আমাক নিয়ে যাও। বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল আমি কিভাবে দিব। এরপর যাওয়ার চেষ্টা করলে দারোয়ান দরজা খুলে না দিলে আবার বাসায় এসে বেলকুনিতে গিয়ে সিগারেট খাওয়া শুরু করেন। আমি ঘুমিয়ে পরি, এরপর জেগে উঠে বেলকুনিতে গিয়ে দেখি গ্রিলের সঙ্গে ওড়না পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। পা জুতাসহ নিচের মেঝেতে লাগানো ছিল। আমি ওড়না টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধড়াস করে ফ্লোরে পড়ে যান। পরে পাশের ফ্লাটে থাকা আমার জা আদুরিকে চিৎকার করে ডাকি। তারপর গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসি।

রংপুর মেট্রোপলিটন মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস আমাদের সময়কে জানান, এমনিতেই ঢাকার সাভার থানা এলাকার ঘটনা। তার ওপর মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই আমরা কোনো পদক্ষেপ নেইনি। 

অভিযোগ না পেলেও হত্যার ঘটনায় স্বপ্রণোদিতভাবে আইনগতভাবে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি জানান, মৃতের পরিবার অভিযোগ না দিলে আমাদের করার কিছুই নেই।

এদিকে রংপুর জজকোর্টের এ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, কোনো মাধ্যমে কোনো এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হওয়ার খবর পেলেই প্রশাসন স্বপ্রণোদিতভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। লিখিত অভিযোগের অজুহাতে ওসি সুকৌশলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।