ছাত্রদলের সদস্যসচিবকে মারপিট, ২ আহ্বায়কের পদ স্থগিত
যশোরের চৌগাছা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইমন হাসান রকির ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর রাতেই উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন ও সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোবারক হোসেন রবিনের পদ স্থগিত করেছে যশোর জেলা ছাত্রদল।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চৌগাছা থানার পাশের পাঁচনামনা মোড়ে মেসার্স আর এস ফিলিং স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইমন হাসান রকি জানান, এদিন দুপুরে তিনি ওই পেট্রোল পাম্পে মোটরসাইকেলের তেল নিতে যন। তেল নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসিম ও কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোবারক হোসেন রবিনসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে তার উপর অতর্কিত হামলা চালান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রকি তেল নিতে মোটরসাইকেলের উপর দাড়িয়ে আছেন। হঠাৎ চার থেকে পাঁচজন যুবক রকিকে আক্রমণ করে কিল ঘুষি মারতে থাকেন। একজন লাথিও মারেন। একজন আগে আঘাত শুরু করলে বাকিরাও একযোগে মারধরে অংশ নেয়। রকি মোটরসাইকেলের উপর থেকে নামতেও পারেননি।
এদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জসিম উদ্দীন ও চৌগাছা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোবারক হোসেন রবিনের সাংগঠনিক পদ স্থগিত করেছে যশোর জেলা ছাত্রদল। রাতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর ও সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পির অনুমোদিত স্থগিতাদেশের কথা জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক রাজিবুল হক তূর্য্য স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এদিকে এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন চৌগাছা থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
তবে ইমন হাসান রকি জানিয়েছেন, দলীয় সিনিয়র নেতারা কী সিদ্ধান্ত নেন দেখে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
এ বিষয়ে জসিম ও মোবারকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ছাত্রদলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার ফিলিস্তিনে ইসরাইলি অগ্রাসনের প্রতিবাদে চৌগাছায় সাধারণ ছাত্র জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়। মিছিলে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইমন হাসান রকি, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মেহরান হাসান জিতুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। ওই বিক্ষোভ সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, চরমোনাইয়ের ইসলামি আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সেখানে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইমন হাসান রকিও বক্তব্য রাখেন। এ বিষয় নিয়ে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যশোর জেলা ছাত্রদল ইমন হাসান রকিসহ উপজেলা, পৌর ও বিভিন্ন ইউনিয়নের চার ছাত্রদল নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ করে। এছাড়া ওই সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নেওয়ায় মোবাইলে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিনসহ নেতৃবৃন্দকে তিরস্কার করে জেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ। বিষয়টি নিয়ে জসিম রকির উপর ক্ষুব্ধ ছিলো।
অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঘোষিত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ছাত্রদলের কর্মসূচি। ইমন হাসান রকি নিজ অনুসারী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চৌগাছা সরকারি কলেজে গিয়ে কর্মসূচি সেরে ফেলেন।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন এবং সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোবারক হোসেন রবিন পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষসহ সিনিয়র শিক্ষকরা জানান, সদস্য সচিব রকি তো কর্মসূচি সেরে চলে গেছেন। বারবার শিক্ষার্থীদের দিয়ে কর্মসূচি করলে তো তাদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এতে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন ও সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোবারক হোসেন অপমানিত বোধ করেন। তারা রকির কাছে কৈফিয়ত নেওয়ার জন্য খুঁজতে থাকেন। পরে খুঁজতে খুঁজতে ওই ফিলিং স্টেশনে রকিকে পেয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিল ঘুষি লাথি মারেন।
