ট্রাম্পের শুল্কারোপ ইস্যুতে শেয়ারবাজারে দরপতন

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ট্রাম্পের শুল্কারোপ ইস্যুতে শেয়ারবাজারে দরপতন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে বৈশ্বিক শেয়ারবাজার নাস্তানাবুদ। ঈদের ছুটি শেষে গতকাল রবিবার বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম দিনেই ট্রাম্পের শুল্কের কিছুটা ধাক্কা লেগেছে দেশের শেয়ারবাজারে। গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বের সব দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে তার নিজ দেশসহ বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে। তবে বাংলাদেশের বাজার নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, দরপতন বেশি হচ্ছে বস্ত্র খাতের শেয়ারে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য বস্ত্র। তবে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কারোপের তেমন প্রভাব পড়ার কারণ

দেখছেন না কেউ। তা ছাড়া অতীতের মতো এমন সংকটে বাংলাদেশের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ বাণিজ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে ট্রাম্প বাংলাদেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্কারোপ করেছেন। তা ছাড়া শুল্কারোপে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যমূল্য বাড়বে। বিশেষত উচ্চমূল্যের পণ্যের ক্রয় চাহিদা কমে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

গতকাল দিনের শুরুতে বাজারগুলোতে সূচকের বড় ধরনের পতন ঘটতে দেখা গেলেও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে বাজার পরিস্থিতি দ্রুতই পাল্টে যায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি আগের ৫ হাজার ২১৯ দশমিক ১৬ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করে প্রথম ২০ মিনিটে নেমে আসে ৫ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে সূচকটির প্রায় ৪৬ পয়েন্ট হারায় বাজারটি। পরে হারানো সূচকের অনেকটাই ফিরে পায় ডিএসই। দিনশেষে প্রধান সূচকটির ১৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট অবনতি রেকর্ড করা হয়। তবে এ সময় ডিএসইর অন্য দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচকের দশমিক ২৮ পয়েন্ট অবনতি ঘটলেও মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো দিয়ে গড়া ডিএসই-৩০ সূচকটি ১৪ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবগুলো সূচকের উন্নতি ঘটে। এখানে সিএসই সার্বিক মূল্যসূচক ১৯ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৮৭ দশমিক ৬২ ও ১১ দশমিক ৬২ পয়েন্ট।

গতকাল ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ তালিকার প্রথম স্থানটি দখলে রাখে বেক্সিমকো গ্রুপের ওষুধ খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এদিন ৩০ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ২৯ লাখ ৯১ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়। দিনের দ্বিতীয় অবস্থানটিও ছিল একই গ্রুপের কোম্পানি শাইন পুকুর সিরামিকসের। ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকায় ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয় কোম্পানিটির। ডিএসইর লেনদেনে শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে বিচ হ্যাচারি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইস্টার্ণ হাউজিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারেও লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় ছিল এ কোম্পানিগুলো।

দুই বাজারেই দিনের মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে আসে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। ঢাকায় ৯ দশমিক ৭৮ ও চট্টগ্রামে ১০ শতাংশ দাম বাড়ে কোম্পানিটির। দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নেওয়া অন্য কোম্পানিগুলো ছিল যথাক্রমে এনসিসিবি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, শাইন পুকুর সিরামিকস, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড এনআরবি ফান্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও জনতা ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

দিনের দরপতনের তালিকায় প্রথমেই ছিল বিচ হ্যাচারিজ। গতকাল ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে হাক্বানি পেপার অ্যান্ড পাল্প ৮ দশমিক ১৬, হামিদ ফেব্রিক্স ৭ দশমিক ৪৩, সিমটেক্স ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ দর হারায়। এ তালিকায় আরও ছিল যথাক্রমে নিউলাইন টেক্সটাইলস, মেট্রো স্পিনিং, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, ভিএসএফ থ্রেড ও মুন্নু ফেব্রিক্স লিমিটেড।