রাজস্ব পরিস্থিতি খারাপ ঋণ নিয়ে উদ্বেগ
আইএমএফ মিশনের ব্যস্ত সময় পার
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মিশন গতকাল রবিবার দিনভর ঢাকায় ব্যস্ত সময় পার করেছে। অর্থসচিব, অথ উপদেষ্টা, অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ও খারাপ ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজস্ব সংগ্রহ, খেলাপি ঋণ আদায় ও বিনিময় হার বাজারে ছেড়ে দেওয়ার মতো নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘গুড ইনটেনশন’ বা সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে। এখন আইএমএফ কী করে, সেটাই দেখার বিষয়। আইএমএফ টাকা দেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে আমরা আমাদের যা করণীয়, তা করছি।
আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। বৈঠকে আইএমএফ বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের হার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দেশে লাখ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দিচ্ছে শূন্য দেখিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যেখানে নেপালের ১২ থেকে ১৩ শতাংশ এবং ভারতের ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। এই বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় এবং একক বিনিময় হার বাস্তবায়ন নিয়েও সংস্থাটির উদ্বেগ রয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আইএমএফের দৃষ্টিতে স্থিতিশীল এবং সঠিক পথে রয়েছে। তবে সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা ও বাজেট ঘাটতি কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের পৃথক আলোচনা হবে। এরপর আগামী ১৯ এপ্রিল তিনি ওয়াশিংটনে আইএমএফের বসন্ত সভায় অংশ নেবেন, সেখানে এসব বিষয় আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুন মাসে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য এই মিশন অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যালোচনা করবে। মে-জুন মাসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে কর আদায় বাড়াব কীভাবে এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়- এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে।
ঋণখেলাপি ও ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খারাপ ঋণ কীভাবে কমাব, আইন সংশোধন- এসব নিয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতি যেহেতু কমতে শুরু করেছে এবং সেটা যদি সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে আসে তবে পলিসি রেট কমানোর বিষয়ে ভাবতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিময় হার নির্ধারণের বিদ্যমান পদ্ধতি তুলে দিয়ে তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। এর জবাবে গভর্নর বলেছেন, কোনো অনুমানের ভিত্তিতে নয়, মূল্যস্ফীতি কমার প্রকৃত ডাটা পাওয়ার পরই পলিসি রেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর মূল্যস্ফীতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় না আসা পর্যন্ত বিনিময় হারের বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পরিপালন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে যেসব সংস্কার রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি নিয়েও দাতা সংস্থাটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।