দুই ব্রিটিশ নারী এমপি ইসরায়েলে আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
দুই ব্রিটিশ নারী এমপি ইসরায়েলে আটক

ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলায় দুই ব্রিটিশ এমপিকে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দুই এমপি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ নথিবদ্ধ করা এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। খবর বিবিসির।

ইউয়ান ইয়াং ও আবতিসাম মোহাম্মদ নামের দুই এমপি শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে তেল আভিভের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে পৌঁছেন। তাদের সঙ্গে দুই সহকারীও ছিলেন। ইসরায়েলি প্রশাসনের ভাষ্যমতে, তারা বিমানবন্দরে নিজেদের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য বলে পরিচয় দেন। কিন্তু ইসরায়েলি কোনো কর্মকর্তা এমন কোনো দলের ইসরায়েল ভ্রমণের বিষয়ে অবগত ছিলেন না।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ের ব্রিটিশ ওই দল ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ ও ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্য প্রচার’-এর উদ্দেশ্যের কথা স্বীকার করেছেন বলেও দাবি করছে ইসরায়েল। স্বীকারোক্তি আদায়ের পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোশে আরবেল তাদের যুক্তরাজ্যের ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি নিশ্চিত করেন, ইসরায়েলে যাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে যাননি, এটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলই ছিল। ইসরায়েলের এমন আচরণের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুই ব্রিটিশ এমপিকে আটকানো এবং ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা দেওয়া অগ্রহণযোগ্য এবং অত্যন্ত উদ্বেগের। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তারা এমন আচরণ করতে পারেন না। আমরা দুই এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছি।’

এমপি আবতিসাম মোহাম্মদ ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত। তিনি লেবার পার্টি থেকে শেফিল্ড সেন্ট্রাল আসনের এমপি। ফিলিস্তিনি অধিকারের ব্যাপারে বেশ সরব। এমপি ইউয়ান ইয়াং চীনা বংশোদ্ভূত বর্তমানে লেবার পার্টির এমপি হিসেবে আর্লি ও উডলি আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতাও করেছেন। এর আগেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করায় দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ইউরোপীয় এক রাজনীতিককে। ইসরায়েলি পণ্য বয়কট আন্দোলনে জড়িত থাকা এবং ইসরায়েলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দেশটিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ফরাসি-ফিলিস্তিনি রাজনীতিক রিমা হাসানকে।

বুধবার হাউস অব কমন্সে আবতিসাম মোহাম্মদ ইসরায়েলকে ‘জাতিগত নির্মূল’ এবং ‘গাজা ধ্বংসযজ্ঞে’ লিপ্ত বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘৩০ মার্চ ঈদের দিন ইসরায়েলি হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাফাহ শহর থেকে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাসের বৃহত্তম উচ্ছেদ চালাচ্ছে। এর শেষ কোথায়? ইসরায়েলকে থামানো যাবে না, থামবে না। তাদের মূল লক্ষ্য কি জাতিগত নির্মূল? গাজার সম্পূর্ণ ধ্বংস? গাজা ও পশ্চিম তীরে স্থায়ী দখল? দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সব পথ বন্ধ করা? আমরা সব দেখছি।’

৩১ মার্চ এই এমপি ইউয়ান ইয়াং ফেসবুকে লেখেন, ‘ঈদ মোবারক! আগামী সপ্তাহে আমি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে পশ্চিম তীর সফর করব। এই ঈদে আমি জানি আমরা অনেকেই তাদের কথা ভাবছি, যারা আমাদের মতো করে আনন্দ উদ্?যাপন করতে পারছে না।’ উত্তর গাজায় বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করায় গত ৭ জানুয়ারি পার্লামেন্টে ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোত্রিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও দাবি জানান তিনি।