নীল নকশার নির্বাচন আয়োজন!

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম
০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নীল নকশার নির্বাচন আয়োজন!

ফ্যাসিবাদী কায়দায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে। ‘নীল নকশা’র এ নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও স্বৈরাচার সরকারের দোসর ব্যবসায়ীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জোর দাবি তুলেছেন সাধারণ শিপিং এজেন্ট মালিকরা।

এদিকে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ভেন্যু পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন। নগরীর আগ্রাবাদ হোটেলের ইছামতি হলে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও গত শনিবার নির্বাচন কমিশন সেটি পরিবর্তন করে রেডিসন ব্লু বে ভিউর মেজবান হল নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কয়েকজন প্রার্থী আপত্তি জানিয়েছেন। হঠাৎ করে নির্বাচনের স্থান পরিবর্তনে কমিশনের দুরভিসন্ধী দেখছেন তারা। কারণ হিসাবে বলছেন, অতীতে আরও বেশি ভোটার থাকলেও আগ্রাবাদ হোটেলে ভোট হয়েছে। এ ছাড়া শিপিং ব্যবসায়ীদের অফিস আগ্রাবাদকেন্দ্রিক। দূরত্বের কারণে অনেক ভোটার রেডিসন ব্লুতে যেতে পারবেন না।

বৈষম্যবিরোধী শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ী ফোরামের আহ্বায়ক মশিউল আলম স্বপন আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী দোসর হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কিছু শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ী পতিত স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গত চার বছর ধরে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন দখল করে আছে। বিগত দুই নির্বাচনের মতো তারা আবারও একতরফাভাবে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। ভোটারদের দাবি উপেক্ষা করে অনেক এজেন্টকে ভোটার না করে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। এমন পাতানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আগামী ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের ভোটার হওয়ার সুযোগ না দিয়ে মাত্র ২২৬ জন ভোটারের নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নমিনেশন জমার শেষ সময় ছিল ৯ মার্চ; ১২ মার্চ প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ১৮ মার্চ খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ২৫ মার্চ ছিল প্রত্যাহারের শেষ সময়। ২৭ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়।

২৪টি পদের বিপরীতে ৪৫ জন নমিনেশন সংগ্রহ করেন এবং ৮ জন প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে ২৪ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৭ জন। এর মধ্যে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ১৬ পদের বিপরীতে নমিনেশন সংগ্রহ করেন ২৮ জন, ৬ জন প্রত্যাহার করে নেন এবং অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরিতে ৮ পদের বিপরীতে ১৭ জন প্রার্থী নমিনেশন সংগ্রহ করলেও দুজন প্রত্যাহার করে নেন।

অভিযোগ রয়েছে, আগ্রাবাদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তারেক কামাল। একটি সিন্ডিকেটের পক্ষ হয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে কাজ করেন তিনি। তবে অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে তারেক কামাল বলেন, এখানে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। যে কয়টি নির্বাচন করেছি কোনো অভিযোগ আসেনি। এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে, আমি সরে যাব; অসুবিধা তো নেই। ভেন্যু পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, গত শনিবার আমরা জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হওয়ার কারণে পরিবর্তন করতে হয়েছে। ভোটাররা আগ্রাবাদকেন্দ্রিক হওয়ার পরও কেন রেডিসনে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অফিস হলেও অনেকের বাসা এদিকে।

অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন। তার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগের দোসর ব্যবসায়ীদের কব্জায় রাখতে চায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। ফলে এমন পাতানো নির্বাচনের নীল নকশা করা হয়েছে।

মশিউল আলম বলেন, সৈয়দ আরিফ ফ্যাসিবাদের ঘনিষ্ঠ দোসর হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ক্ষমতা কাঠামোর নিকটজন পরিচিত ও তার সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীর কালো টাকার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সংগঠন পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনকে তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মাধ্যম বানিয়েছেন।

এদিকে ভোটার বেশি হওয়ার কারণে ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করলেও তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন নির্বাচনের প্রার্থী সাহেদ সরওয়ার। তিনি বলেন, ২০২১-২৩ মেয়াদে ২৬৭, ২০২৩-২৫ মেয়াদে ২৩০ জন ভোটার থাকার পরও আগ্রাবাদ হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারের ভোটার ২২৬ জন। নির্বাচন কমিশন কোনো একটি পক্ষের স্বার্থরক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে?