চাঁদ মামা প্রকাশের পর অসম্ভব সুন্দর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি

বিনোদন সময় প্রতিবেদক
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
চাঁদ মামা প্রকাশের পর অসম্ভব সুন্দর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি

সংগীতশিল্পী অদিতি রহমান দোলা। শাকিব খানের ‘বরবাদ’ সিনেমায় গেয়েছেন প্রীতম হাসানের সঙ্গে দ্বৈত গান ‘চাঁদমামা’। গানটি প্রকাশের পর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ গান ও দোলার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ

আপনার সংগীতযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাই।

খুব ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে ওঠাবসা। পরিবারে নানি, খালা গান করতেন। আমার বাবা ফিল্ম প্রডিউসার ছিলেন। সাইদুর রহমান মানিক। আশির দশকের প্রডিউসার ছিলেন। ‘অবরোধ’, ‘খোকনসোনা’, ‘রাজত্ব’ সিনেমা করেছেন। সেই পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেই বেড়ে ওঠা। তিন বছর বয়স থেকে সেমি-ক্লাসিক্যাল দিয়ে শুরু ওস্তাদজি কাজল দেবের কাছে। ওস্তাদজি আমাকে চকোলেট দিয়ে গান শেখাতেন। গান শোনা, সুর কানে আসার অভ্যাসটা তৈরি হয়ে যায় ছোট থেকেই। এটা চলতে থাকে স্কুল লাইফ পর্যন্ত। কলেজে ওঠার পর ওস্তাদ সঞ্জীব দের কাছে কিছুদিন শেখা হয়। আমার দুজন ওস্তাদজিই বাবার বন্ধু ছিলেন। আমার দাদা অদিত রহমান যখন মিউজিক কম্পোজ শুরু করলেন, তখন তিনি আমার ভয়েস নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করেন।

আপনি তো নিয়মিত সিনেমায় গাইছেন। প্রথম সিনেমার গান কোনটি ছিল?

২০১১ সালে প্রথম গানে পরিচিতি পাই ‘দেহরক্ষী’ সিনেমার ‘রাতের রানি সুহানা’ আইটেম গানের মাধ্যমে। এরপর ‘রাজত্ব’, ‘ওয়ানওয়ে’, ‘বিগব্রাদার’, ‘অগ্নি’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ প্রভৃতি সিনেমায় দশটির মতো গান গাওয়া হয়েছে।

কোন গানগুলোর মাধ্যমে আপনি সবচেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন?

শাকিব খানের রাজত্ব সিনেমার ‘তুমি ছাড়া’ গানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার প্রথম স্বাদ পাই। মানুষ চিনতে শুরু করল আমাকে। এরপর ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের থিম সং গেয়েছি। এটা তো সবাই শুনেছে। দাদার সুর ও কম্পোজিশনে ২০১৫ সালে উইন্ড অফ চেঞ্জ থেকে প্রকাশ হয় সেমিক্লাসিক্যাল ‘জোছনা’। ২০১৬ সালে প্রকাশ হয় ‘মন দরিয়া’। এটি পাপনের সঙ্গে দ্বৈত গান গেয়েছিলাম। এই গানও জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ‘আমি দোলা’ প্রকাশ হয় ২০২১ সালে। এ গানের মাধ্যমে দোলাকে সরাসরি অনেক মানুষ চিনেছে। গত বছর ‘বৈশাখে বাংলামি’ প্রকাশ হয়। আমি, মমতাজ আপা ও জোহাদ গেয়েছিলাম। এ গানটিও ছড়িয়ে পড়ে অনেকের মাঝে।

আপনি একই সঙ্গে সেমি-ক্লাসিক্যাল, আবার আইটেমও গাইছেন! এটা কীভাবে সম্ভব?

এটা সম্পূর্ণ চর্চার ওপর নির্ভর করছে। আমি নিয়মিত চর্চা করি। একটা গান আমার কণ্ঠে যতক্ষণ পর্যন্ত না বসে, ততক্ষণ আমি গাওয়া ছাড়ি না; গাইতেই থাকি।

আপনার প্রকাশিত এত গান, এত কাজ থাকার পরও অনেকটাই আড়ালে। এর কারণ কী? আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন?

আমি সবসময় চাইতাম আমার গান, আমার কাজটাই মানুষ বেশি ভালোবাসুক। সারাজীবন চেয়েছি, মানুষ আমাকে মৌলিক গান দিয়েই চিনুক। আমার মনে হয় এটিই শিল্পীর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আমাকে আমার গানের জন্য মানুষ যদি ভালোবাসে এর ওপর আর কী লাগে? আমি আড়ালে নয়, আলোতেই আছি। সবাই আমাকে দেখতে পায়। অনেকেই মনে করেন হয়তো সবার সঙ্গে গান করি না। এটা একটা ভুল ধারণা। সুন্দর সব কাজের সঙ্গেই আছি। আমার তো বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। আমার আরেকটা প্রফেশন আছে।

সেই প্রফেশনটা সম্পর্কে জানতে চাই।

আমি প্রফেশনালি একজন ব্যারিস্টার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করছি। এই প্রফেশনে আসা হয়েছে বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য। বাবাও একজন সিনিয়র আইনজীবী। বাবার চাওয়া যে আমি পূরণ করতে পেরেছি; এটাও আমার এক জীবনে অনেক প্রাপ্তি। দুটি প্রফেশন ম্যানেজ করে ব্যস্ততার মাঝেই আমার পথচলা।

শাকিব খানের বরবাদ সিনেমায় গাওয়ার সুযোগ এলো কীভাবে?

প্রীতম হাসানের সঙ্গে এর আগে মিশন এক্সট্রিম সিনেমায় ‘জানি তুমি ছিলে’ দ্বৈত গান গাওয়া হয়েছে। কম্পোজিশন করেছিলেন দাদা। প্রীতম হাসানের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। হঠাৎ করেই এক অনুষ্ঠানে প্রীতম আমাকে বলেন, আপু একটা গান আছে। আপনাকে গাইতে হবে। গত বছর শেষের দিকে এই গানটি নিয়ে বসা হয়। এ বছরের শুরুর দিকে ভয়েস দিই। রেকর্ডিং সেশনটা খুব মজার ছিল। রেকর্ড শেষে আমরা গান ছেড়ে নাচা শুরু করি। খুবই মজার ছিল। প্রীতম তখন বলেছিলেন, আপু, যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি।

‘চাঁদ মামা’ প্রকাশের পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

চাঁদ মামা প্রকাশের পর অসম্ভব সুন্দর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। সাত দিন ধরে টানা ট্রেন্ডিংয়ের ১ নম্বরে। কোটি ভিউ ছাড়িয়ে গেছে। ভক্তরা ক্লিপস পাঠাচ্ছে, নাচ পাঠাচ্ছে। ঈদের প্রতিটি মুহূর্ত মানুষ ‘চাঁদ মামা’র সঙ্গে কাটাচ্ছে। দুনিয়াজুড়ে এই গানের রিভিউ হচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে ভক্তদের ভালোবাসায় ভাসছি।