বদরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ১

রংপুর প্রতিনিধি
০৫ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:১৬
শেয়ার :
বদরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ১

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ২ জনের মধ্যে লাবলু মিয়া (৫০) নামে একজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান।

নিহত লাবলু মিয়ার বাড়ি উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নে।

দিনব্যাপী দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের সমর্থক মোন্নাফ (৬০), কাঁচাবাড়ি এলাকার মিতু মিয়া (৪০) একই এলাকার মৃত আফসার আলী ছেলে শফিকুল (৫৫), কাঁচা বাড়ির রুহুল আমিনের ছেলে জয়নাল (২৫), মৃত মোহাম্মদ আলী ছেলে মুন্না ও মংলু গুরুতর আহত হলে তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে গ্লোবাল টেলিভিশনের রংপুর জেলা প্রতিনিধি নুরুন্নবী নুরু, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফুয়াদ হোসেন বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন সাইফুল ইসলাম মুকুলসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের উপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরাও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন মোহাম্মদ আলী সরকারের সমর্থকরা।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'কে বা কারা কার দোকানে হামলা ভাঙচুর করেছে এই বিষয় নিয়ে মানিক চেয়ারম্যানের লোকজন ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস ও বক্তব্য দিয়ে আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলে মানিক চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালিয়ে আমার লোকজনকে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।'

তবে এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কালুপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক জানান, গত পরশুদিন বিনা কারণে বদরগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী জাইদুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী সরকারের লোকজন হামলা ও লুটপাট চালিয়ে ভাঙচুর করেন। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরোয়ার জাহানসহ আমরা বাধা দিতে গেলে মোহাম্মদ আলীর লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙচুর ও হামলার প্রতিবাদে আজকে সকল ব্যবসায়ী মিলে মানববন্ধন আয়োজন করি। এসময় মোহাম্মদ আলী সরকারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যবসায়ীদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আমাদের ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছে।

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব কমল লোহারি জানান, এটা দলীয় কোনো দ্বন্দ্ব নয়। মোহাম্মদ আলী সরকার ও মানিক চেয়ারম্যান তারা পূর্বে থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তেন। তারই প্রতিফলন আজকের এই সংঘর্ষ।

এদিকে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে জড়িত থাকায় শনিবার দুপুরে রংপুর জেলা বিএনপির (চলতি দাপ্তরিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য) মো. হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দখলদারিত্ব ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিসহ 'দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় কেন দলের গঠনতন্ত্র

মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না' তা জানতে চেয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মানিক ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকারকে পত্র প্রাপ্তির অবহিত হওয়ার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে রংপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর নিকট জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

বদরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম আতিকুর রহমান জানান, বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ ও সেনা টহল চলমান রয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।