বাহাত্তরের সংবিধানের অসম্পূর্ণতা দূর করে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান চাই: প্রিন্স
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানের অসম্পূর্ণতা দূর করে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান চাই। যারা বলে বাহাত্তরের সংবিধান ফেলে দেব, তাদেরকে এ কথা বলার রাইট (অধিকার) কে দিয়েছে? বাহাত্তরের সংবিধানে অসূম্পর্ণতা আছে, যা পূর্ণাঙ্গ করার প্রস্তাব কমিউনিস্ট পার্টি বাহাত্তর সালেই দিয়েছে। বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষমতায় রয়েছেন, তারা বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমেই ক্ষমতায় রয়েছেন।’
আজ শনিবার বিকেলে শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা সিপিবির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘নতুন করে যে সংবিধান সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। যদি কেউ সংবিধান পরিবর্তন করতে চান, তাহলে তারা আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে যাবে। জনগণকে তারা বলবে, ‘‘আমরা সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেব। ’’ এরপর জনগণ যদি তাদেরকে সমর্থন দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করার বা ছুড়ে ফেলার সুযোগ দেয়, তাহলে তারা করবে, কিন্তু এর আগে সংবিধান ছুড়ে ফেলার কে তারা? আমাদের সংবিধান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া সংবিধান।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
নির্বাচন প্রসঙ্গে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন করতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার করে আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। এরপর যারা পার্লামেন্টে যাবেন, তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্যান্য সংস্কার করুক। স্থানীয় নির্বাচনে আমুল সংস্কার প্রয়োজন। যারা সংসদ সদস্য হবেন, তাদের কাজ হবে আইন প্রণয়ন করা। উন্নয়নের কাজ করবে স্থানীয় সরকার। বর্তমানে সংসদ সদস্যের অনুমতি ছাড়া কোথাও কিচ্ছু করা যায় না। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করে, স্থানীয় সরকারকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সকল এলাকায় সমান উন্নয়ন করতে হবে।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এক একটা রাজনৈতিক দল এক এক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। সিপিবি শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে। মানুষ সচেতন ও সংগঠিত হয়ে সিপিবির লাল পতাকা তলে সমবেত হবে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কণ্ঠ সোচ্চার করতে হবে নেতাকর্মীদের। নির্বাচন হলেও মানুষের সার্বিক মুক্তি আসবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে ভোটের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনে সার্বিক মুক্তির সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। আমরা দল নিরপেক্ষ অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ১৯৭১-এর গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখা, পুলিশের লুটপাটের অস্ত্র উদ্ধারসহ মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এ দেশের মানুষকে দূর্বৃত্তায়িত রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বামপন্থীরাই মুক্তিযুদ্ধের অপব্যবহার রোধ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা, নব্বই ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সংগ্রাম এগিয়ে নেবে।’
শরীয়তপুর জেলা সিপিবির সভাপতি নুরুল হক ঢালীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত ভাওয়ালের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য কাজী রুহুল আমিন। এ সময় শরীয়তপুর উদীচীর সভাপতি শফিউল বাসার স্বপন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বিকাশ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক জি কে সাজ্জাদসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।