ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত নাটোর উত্তরা গণভবন
ঈদের লম্বা ছুটিতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত ইতিহাসের স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন নাটোর উত্তরা গণভবন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপ্রিয় মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সারাদেশ থেকে পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে ঘুরতে আসছেন দর্শনার্থীরা।
প্রাসাদের গায়ে নান্দনিক সব কারুকাজ আর চোখ জুড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এ ছাড়া ভেতরে বিরল প্রজাতির নানা উদ্ভিদও নজর কাড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গণভবনের ফটকের সামনে নানা বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শত শত দর্শনার্থীদের। অনেকে স্বপরিবারে কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল যোগে গণভবনের সামনে নামছেন। অনেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে দলবেঁধে গণভবনে ভেতরে প্রবেশ করছেন।
উত্তরা গণভবনের ফটক পার হলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির সারি সারি ফুলের গাছ। পাশেই মিনি চিড়িয়াখানা আর সংগ্রহশালায় শিশু-কিশোরদের ভিড়।
রাজা দয়ারাম রায় ১৭৩৪ সালে ৪২ একর জমির উপর উত্তরা গণভবন রাজ প্রসাদটি নির্মাণ করেন। এ রাজবংশের রাজাগণ ১৭১০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ রাজ্য শাসন করেন।
বিশালাকার এ গণভবনে রয়েছে দিঘী, বাগান, ইটালিয়ান গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, নতুন সংগ্রহশালা ও পাখিদের অভয়াশ্রমসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাহারি রকমের গাছপালা। পুরো গণভবনের চারপাশে উঁচু দেওয়াল দ্বারা বেষ্টিত। গণভবনে প্রবেশদ্বারে রয়েছে বিশাল এক ফটক। গণভবনের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হরেক রকমারি বাহারি ফুল, ঔষুধি গাছ।
গণভবনের সামনের মাঠে দৃষ্টিনন্দন গাঁদা ও গ্লাডিওলাস ফুল গাছ। গণভবনে ঢুকলেই যেন পর্যটকদের ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। এ গণভবন প্রাঙ্গণে আছে ইতালি থেকে সংগৃহীত মনোরম ভাস্কর্যে সজ্জিত বাগান। যেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির নানা উদ্ভিদ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘উত্তরা গণভবন খুব প্রিয় একটি পর্যটক জায়গা। আমার খুব প্রিয় স্থানটি। সময় পেলেই বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে চলে আসি। বিশেষ করে গণভবনে অনেক অজানা গাছ রয়েছে। গাছে সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ। এমন গাছ কোথাও দেখা যায় না।’
পাবনা চাটমোহর থেকে আসা শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উত্তরা গণভবনের বাইরে থেকে দেখলে বুঝার উপায় নেই, ভেতরে এত সুন্দর পরিবেশ। চারদিকে সবুজ গাছ আর ফুল কয়েকগুন সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। সত্যিই বলতে অনেক সুন্দর একটি জায়গা। পরিবার নিয়ে নিরিবিলি ঘুরে বেড়ানোর মতো স্থান।’
কলেজ শিক্ষক আব্দুল রহিম শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সপরিবারে ঘুরতে এসেছি। উত্তরা গণভবন চমৎকার একটি স্থান। এখানে এলে যে কেউ উত্তরা গণভবনের প্রেমে পড়ে যাবে। এখানে বসে আড্ডা দেওয়া আর ঘুড়ে বেড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সবমিলে দারুণ একটি স্থান।’
কামাল হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘প্রতি ঈদে গণভবনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। যতবার এসেছি ততই ভালো হয়েছে। পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর মতো একটি দর্শনীয় স্থান। ছেলে-মেয়েরা প্রাণ খুলে ঘুরতে পারে এখানে এলে। অনেক বিশাল পরিসরে জায়গা।’
গণভবনের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, ‘দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে ঈদের আগেই সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। ঈদের দিন থেকে গণভবনে দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড় ছিল। সারাদেশ থেকে সব বয়সী দর্শনার্থীরা আসছেন। আশা করছি, সামনে আরও উপস্থিতি বাড়বে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসার সদস্য দায়িত্বে রয়েছে।’