সবার ভালোবাসার চোখ আমার দিকে থাকে, এটা আমার জন্য আশীর্বাদ
ঈদ কেমন কাটল। ঈদের দিন কী কী করলেন?
ঈদের দিন সাধারণত যেটা হয়, আগের রাতে একটু রান্না করে রাখা, আবার বাকিটা ঈদের দিন সকালে উঠে রান্না। মাও রান্না করেন। ছবি তোলা, খাওয়া-দাওয়া, নতুন জামা পরা, এগুলো করেই ঈদ কাটে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই আসে। গতানুগতিক যে ঈদ, সেই ঈদই হয়েছে। ঈদের রাতে আমার গান রিলিজ হয়েছে। সেটা নিয়ে আবার সবার ভালোবাসা। সঙ্গে সঙ্গে এই গানে মাতামাতি। একটু বের হওয়া, লং ড্রাইভে গিয়ে গানগুলো শোনা। এই তো।
কোনালের ছোটবেলার ঈদ, ঈদের একটা স্মৃতি জানতে চাই।
ছোটবেলার ঈদগুলোতে বাবা ছিল। বাবা-মা, আমি অর্ক, আমরা একসঙ্গে কুয়েতে ঈদ করতাম। একদম ছোটবেলায়, পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলাম। তারপর কুয়েতে বাবা-মার সঙ্গে চলে যাই। আমার মনে আছে, দাদুবাড়িতে রাতের বেলায় মেহেদি বাটা হচ্ছে। একদিকে আমার ফুপুরা মেহেদি বাটছে, আমাদের দিয়ে দেবে। আমি আমার ফুপুদের ‘নেওটা’ ছিলাম। আমরা নাচের প্র্যাকটিস করছি, নাচব। আমাদের বাড়িটা খুবই পপুলার একটা বাড়ি ছিল। ঈদের দিন অলমোস্ট আমাদের উঠোনে মেলা বসত। সেই এক্সাইটমেন্টটা খুব কাজ করত। চাঁদ রাতটা ছিল ঈদের চেয়ে বড় উৎসব। ছোটবেলার ঈদ অনেক সুন্দর হয় সবার, অনেক স্মৃতি থাকে।
ঈদে গিফট দিতে, না পেতে- কোনটা বেশি ভালো লাগে? মজার একটা গিফট পাওয়ার গল্প শুনতে চাই।
গিফট পেতে কার না ভালো লাগে। তবে আমার প্রিয় মানুষদের গিফট দিতে আরও বেশি ভালো লাগে। আমি বরাবরই মানুষকে দিতে ভালোবাসি। নেওয়া তো অবশ্যই, দেওয়াটাও অনেক বেশি আনন্দের মনে হয়। একশ গুণ বেশি আনন্দ আসে গিফট দিতে পেরে। এটা আমার আশপাশের মানুষ যারা আছে, যারা আমার ভালোবাসার মানুষ তারা জানে। একটা ঘটনা আছে ছোটবেলার, যখন আমি হাইস্কুলে পড়ি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল লিটি, সাউথ ইন্ডিয়ান। ও আমাকে ঈদে গিফট দেবে। আমিও মনে মনে ভাবলাম ও যেহেতু দেবে, আমি তাকে দেব না, সেটা তো হবে না। আমিও তাকে দেব। মজার ব্যাপার হলো, ও আমার জন্য একটা পেন্সিল বক্স কিনেছিল, আমিও ওর জন্য একই পেন্সিল বক্স কিনেছিলাম। যখন দিতে যাই তখন টের পাই এবং হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাই। আসলে বেস্ট ফ্রেন্ডদের মন ম্যাচিং হয়ে যায়। সেটাই ছিল আমার ওয়ান অব দ্য বেস্ট গিফট।
এবার গান প্রসঙ্গে আসি। শাকিব খানের সিনেমায় আবারও গাইলেন। ‘বরবাদ’-এর ‘মায়াবী’ গানের জন্য কতটা সাড়া পাচ্ছেন?
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি। ‘মায়াবী’ গানটা যারাই শুনেছেন তারা পছন্দ করেছেন। একটি নতুন ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিশ ঘণ্টায় ১ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। মানুষ রিলস করছে, টিকটক করছে, পছন্দ করছে গানটি। খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। গতকাল পর্যন্ত দুই মিলিয়নের বেশি ভিউ। গানটি আমি ও ইমরান গেয়েছি।
‘বরবাদ’ দেখা হয়েছে? কবে দেখবেন ভাবছেন?
বরবাদের টিকিটই পাচ্ছি না। টিকিটের খোঁজ করছি। আমার পরিবারসহ বন্ধুরা দেখতে চেয়েছে। কয়েকজন মিলেই দেখতে যাব। এতগুলো টিকিট একসঙ্গে পাওয়ারও একটা ব্যাপার থাকে। যেদিন টিকিট পাব, সেদিনই দেখতে যাব সবাই মিলে।
‘প্রিয়তমা’ সুপারহিট গান। আগের গান বেশি হিট হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে নতুন গানের ক্ষেত্রে কি বাড়তি চাপ অনুভব করেন?
একটা ছাড়া আমি জীবনে আর কোনো কাজে চাপ অনুভব করি না। আর সেটা হলো দায়িত্বের চাপ। আমার দায়িত্ব, আমি যে কাজটা করছি সেটার জন্য আমার ডেডিকেশন, আমার অনেস্টি, আমি হানড্রেড পারসেন্ট দিলাম কিনা, আমার সেইটুকু শুধু মাথায় থাকে। আমি একজন শিল্পী, শিল্পী হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে আমার শিল্পকলাটা মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। এর পর সেই শিল্পকর্মটি নিয়ে মানুষ কখনও আবেগে ভাসবে, কখনও নাচবে, কখনও হাসবে, কখনও দুঃখে কাঁদবে। নিজেদের ইমোশন সঙ্গে করে নেবে আমার কাজটাকে। এসবের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো শিল্পকর্ম হিট হবে, সুপার হিট হবে, মানুষের মুখে মুখে ফিরবে। এই কাজগুলো মনে জায়গা করে নেবে যুগের পর যুগ। ‘ও প্রিয়তমা’ গানটা পৃথিবীর গানপ্রিয় মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অঢেল ভালোবাসা দিয়েছে, এখনও দেয়। আমি এমন অনেক উচ্চমানের প্রোগ্রামে গিয়েছি, যেখানকার প্রধান অতিথি সস্ত্রীক এসে আমাকে বলেছে, আমরা দুজন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার আপনার এই গানটা শুনি। অভ্যাস হয়ে গেছে। আবার স্টেডিয়ামে খেলার মাঠেও এই গান বাজছে, মানুষ সঙ্গে সঙ্গে গাইছে, এনজয় করছে। আমি এমনও ভিডিও দেখেছি একজন গিটার হাতে রিকশায় যাচ্ছে, তখন রিকশাওয়ালা বলছে, মামা আপনার হাতে গিটার, আমি একটা গান গাইতে চাই। তখন রিকশাওয়ালা গিটারের সঙ্গে ‘ও প্রিয়তমা’ গাইছে। স্টেজে যে তরুণ শিল্পীরা গাইছে, সেটার ভিডিও ক্লিপস আমি পাই। লাখ লাখ রিলস, মিলিয়ন মিলিয়ন টিকটক হয়েছে। এগুলো আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়, আরও বেশি দায়িত্বশীল করে। আরও বেশি বেশি কাজ করার তাগিদ অনুভব করি। যে কারণে পরের কাজে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠি।
প্লেব্যাক অনেকেই করে। কোনাল থাকা মানেই সবার চোখ থাকে সেই গানে। এটা ভাবতে কেমন লাগে?
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
দেশে অনেক সিনেমা হয়। দেশের অনেক সংগীতশিল্পী আছেন, সবাই প্লেব্যাক করছেন। সব জেনারেশনের আর্টিস্টরা প্লেব্যাক করছে। এটাই তো স্বাভাবিক এবং এটাই তো হওয়ার কথা। আমার দিকে সবার চোখ থাকে, হয়তো সবাই আমাকে ভালোবাসে। তারা হয়তো আমার কাছ থেকে ভালো ভালো গান প্রত্যাশা করে। আমি যেন কাজের মধ্যে থাকি। এটাই তাদের চাওয়া থাকে। আমিও কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। নিজের সংগীতশিক্ষার মেধা দিয়ে, মনপ্রাণ উজাড় করে গান গাইব, এটাই চেষ্টা করি। প্লেব্যাকের ক্ষেত্রে প্রযোজক, পরিচালকের চাহিদায় গান হয়। তারা আমাকে যোগ্য মনে করেন। গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালকরা ভালোবেসে আমাকে গাইতে দেয়। আমি কিন্তু সেই সেরাকণ্ঠ থেকে ভালোবাসা পেয়ে আসছি। সাধারণ দর্শকরা যখন আমাকে ভোট দিয়েছে, আমাকে ভালোবেসেছে, এখনও তারা সে ভালোবাসা দেয়। আমি বাংলা গানের চার দিকপালের হাত ধরে, তাদের গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে, তাদের ভালোবাসা-আশীর্বাদ নিয়ে এবং তাদের নাম্বার নিয়ে আজকের এই অবস্থানে। শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা ম্যাডাম, সাবিনা ইয়াসমিন ম্যাডাম, আলাউদ্দিন আলী স্যার, সুবীর নন্দী স্যার। তাদের হাত ধরেই আজকে আমার এই জায়গায় আসা। আমি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটা হয়েছে সেটা হলো, নিজের কাজটা ভালোবেসে করে যাওয়া। এই পৃথিবীটা একমাত্র ভালোবেসে জয় করা সম্ভব। যুদ্ধ, হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি ছাড়া একমাত্র শিল্পীরাই পারে পৃথিবী জয় করতে। আমিও ভালোবাসা থেকে আমার কাজটা করে যাই। সংগীতের প্রতি, শ্রোতার প্রতি আমার ভালোবাসা এবং দেশ-বিদেশের ভক্ত-শ্রোতারা প্রতিনিয়ত আমাকে সেই ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছে। সবার ভালোবাসার চোখ তাই আমার দিকে থাকে। এটা আমার জন্য আশীর্বাদ, দোয়া মনে করছি।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা