মেসে থাকা উপদেষ্টারা ৬ কোটির গাড়িতে চড়েন, পড়েন ৪০ লাখের ঘড়ি

নোয়াখালী প্রতিনিধি
০৩ এপ্রিল ২০২৫, ২১:২৭
শেয়ার :
মেসে থাকা উপদেষ্টারা ৬ কোটির গাড়িতে চড়েন, পড়েন ৪০ লাখের ঘড়ি

সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা আগে হলে-মেসে থাকলেও এখন তারা ৬ কোটি টাকা দামের গাড়িতে চড়েন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্যাহ বুলু।  

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত উপজেলার সাত শহিদ পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার মলিন চেহারা এখন রসাল হয়ে গেছে। তারা আগে হলে-মেসে থাকলেও এখন চড়েন ৬ কোটি টাকার গাড়িতে। গায়ে দেন ৩০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি আর হাতে পড়েন ৪০ লাখ টাকার ঘড়ি। তাদের তদবিরে প্রশাসন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ থেকে জাতি মুক্তি চায়।’

বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, ‘নতুন দলের (এনসিপি) এক নেতা একশর অধিক গাড়ি বহর নিয়ে বাড়ি গেছেন। ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৫ কোটি টাকার ইফতার খাওয়ান। আগে ৫০০ টাকার পাঞ্জাবি পরলেও এখন পরেন ৩০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি। জুতা পরেন ৫০ হাজার টাকার। ব্যবসায়ী-প্রশাসন তাদের তদবির আর বদলি বাণিজ্যে অতিষ্ঠ। তারা কি সরকার নাকি? মব জাস্টিজের নামে মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা নৈরাজ্য করা হচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা দেশে দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা বলে, তারা জনগণের পক্ষে রাজনীতি করে বলে আমি মনে করি না। যারা ৩০ লাখ শহিদকে অস্বীকার করে, একাত্তর ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে মানে না এবং এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করে তারা আসলেই দেশ গণতন্ত্র ও জনগণের শত্রু। তাদের ভোট চাওয়া, প্রার্থী হওয়া কিংবা এ দেশে রাজনীতি করা কোনো অধিকার নেই।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড। এ বাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান যদি হাসিনাকে তার মাতৃভূমি ভারতে পাঠিয়ে না দিত তাহলে বাংলাদেশে আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটত। যারা এ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আসলেই দেশের শত্রু ।’

বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দুই হাজার নিহত ও আহত হয়েছেন ২০ হাজার। এরমধ্যে ৮৬২ শহিদ বিএনপির নেতাকর্মী। সেদিন তারেক রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। বিগত ১৭ বছর তিনি (তারেক রহমান) লন্ডনে থেকে পঞ্চাশটির অধিক রাজনৈতিক দলের ঐক্য গড়ে আন্দোলন বেগবান করেন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বহু-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমরা ড. ইউনূসের জন্য দোয়া করি। তিনি যেন দীর্ঘায়ু হন এবং দেশে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করেন।’

বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, ‘আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি মানবিক ও মহানুভব। তারেক রহমান শত ব্যস্ততার মাঝেও আমার এলাকার জুলাই-আগস্ট শহিদের ভুলেননি। তাদের জন্য জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঈদ উপহার পাঠিয়েছেন। এছাড়াও তিনি (তারেক রহমান) কাউকে বাড়ি, কাউকে চিকিৎসা অনুদানসহ নগদ অর্থ প্রদান করে আসছেন।’

এ সময় বেগমগঞ্জের জুলাই-আগস্টের শহীদ মো. ফারুক, মো. সজিব, ইফফাত হোসেন, আবদুল মোতালেব মোল্লা, মো. আশিক হোসেন, মো. বেলাল হোসেন ও মো. রুবেলের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করেন। তারেক রহমানের সাক্ষর করা শান্তনা চিঠিও প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেন। পরে শহিদ পরিবারে সঙ্গে মধ্যহ্নভোজে অংশ নেন বিএনপির এই নেতা। অনুষ্ঠানে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাবু কামাখ্যা চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য ও বরকত উল্যাহ বুলুর সহধর্মীনি শামীমা বরকত লাকী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন, সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলমসহ আরও অনেকে।