সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।এদিন সকালে বিভিন্ন জেলায় পৃথক সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দৈনিক আমাদের সময়ের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
বগুড়া
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রবিবার সকালে জেলার তিন উপজেলার তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গাবতলী উপজেলার রেলস্টেশনের পার্শ্বে একটি মাঠে অর্ধশত মুসল্লিরা সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া ধুনট উপজেলার হাশুখালী গ্রামে ও সোনাতলার কালাইগাটা গ্রামে কয়েক বাড়ির মুসল্লিরা সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
শিশু ও নারীরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এ সময় অপ্রীতিকর ঘটনায় এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মুসল্লিরা দাবি করেন, ‘পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা হারাম। সারা পৃথিবীতে ঈদ হচ্ছে, সে হিসেবে আমরাও পালন করছি। এর আগেও ঈদ পালন করেছি।’একই তারিখে রোজা রাখা ও ঈদ উদ্যাপন করার জন্য সব মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান মুসল্লিরা।
বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) আশিক ইকবাল জানান, বেশ কয়েকজন মুসল্লি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী আজই ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। গাবতলীতে ঈদ জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনু্ষ্ঠিত হয়েছে।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে।সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবী মুন্সিপাড়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা ইমান আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চর রুদ্রেশ্বর, তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট আহলে হাদিস জামে মসজিদ ও একই ইউনিয়নের বোতলা এলাকায় এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোজা ও ঈদ করেন এসব গ্রামের মুসল্লিরা।
মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি কায়দে আজম জিন্নাহ বলেন, ‘সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ হবে। এ বিশ্বাস থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ২০১১ সাল থেকে এ এলাকার মানুষ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, শবে কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে আমরা ঈদ পালন করি। এতে ঈদের জামাতে ৫ শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন অন্য জামাতে।’
ঈদগাহ মাঠের ইমাম ইমান আলী বলেন,‘শুরু থেকেই এই মাঠে আমি ইমামতি করে আসছি। একদিন আগে ঈদ হয় এতে কোনো প্রকার সমস্যা আজ অবধি হয়নি।’
একদিন আগে কেন ঈদের নামাজ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোরআন থেকে জেনে শুনে আমরা ঈদ পালন করে আসছি, এখানে কোনো ভুল নেই। আমাদের মতো দেশের সকল মানুষের ঈদ পালন করা উচিত। তাহলে ঈদের আনন্দ আরও বেড়ে যাবে।’
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে অনেক আগে থেকে এসব এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করে আসছে কিছু মানুষ। নামাজ আদায়ের সময় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই সুরেশ্বর দরবার শরীফে ৩০টি গ্রামের মুসল্লির অংশগ্রহণে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে রোজা কবুলের ফরিয়াদ ও বিশ্ব উম্মাহর জন্য শান্তি কামনা করেছেন দরবার শরীফের ভক্ত-অনুরাগী মুসল্লিরা।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় দরবার শরীফের ঈদগাহ মাঠে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত জামায়াত দুটিতে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভক্ত ও সুরেশ্বর দরবার শরীফের আশেপাশের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্য হিসেবে পালিত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পৃথক জামায়াত দুটিতে ইমামতি করেছেন শাহ সুফি সৈয়দ বেলাল নূরী আল সুরেশ্বরী ও মাওলানা মো. জুলহাস উদ্দিন।
জানা যায়, জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরী নামে এক সুফি সাধক কর্তৃক শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত সুরেশ্বর পাক দরবার শরীফের কয়েক লাখ ভক্ত ও অনুরাগী রয়েছেন সারাদেশে। পিরোজপুর, ভোলা, মাদারীপুর, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ভক্ত ও অনুরাগীরা ১৯২৮ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের একদিন আগেই রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন।এর মধ্যে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর, কেদারপুর, চাকধ্, চন্ডিপুর ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দারাগড়সহ ৩০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে আজ বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছেন।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও সুরেশ্বর দরবার শরীফে একই সময়ে পৃথক মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের দুটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামায়াত দুটিতে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভক্ত-অনুরাগী ও স্থানীয় ৩০ গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নারী-পুরুষ ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে রোজা কবুলের ফরিয়াদ ও বিশ্ব উম্মাহর জন্য শান্তি কামনা করেন।
দরবার শরিফের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (প্রধান খাদেম) মুনছুর আলী মৃধা বলেন, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভক্ত-অনুসারী সুরেশ্বর দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশ নিয়েছেন। সারাদেশে সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রায় ১০ লাখ ভক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি অনুসারী নিজ নিজ এলাকায় ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।
এ ছাড়া গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, সাতক্ষীরার ১০ গ্রাম, ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ১০ গ্রাম, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুসহ দেশের নানা জেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।