নিহতের সংখ্যা ১৬শ ছাড়াল

আমাদের সময় ডেস্ক
৩০ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নিহতের সংখ্যা ১৬শ ছাড়াল

শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন। দক্ষিণ-পূূর্ব এশিয়ার আট দেশে গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমার। প্রাথমিক খবরে দেশটিতে প্রায় ৭০০ জন মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছিল। মিয়ানমার ছাড়াও প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন। শত শত লোক ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশ দুটিতে হতাহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশেষত মিয়ানমার থেকে পরিষ্কার জানা যায়নি। কেননা, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে ও সেখান থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে হাজারের অধিক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি হাজারো ঘরবাড়ি ধসে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে গতকালও মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে ছয়টি পরাঘাত (আপটার শক) হয়েছে। বিবিসি ও এএফপি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, গত শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বড় শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটার শক) হয়। ইউএসজিএসের অনুমান, মিয়ানমারে নিহতের

সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিশ্বে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর একটি মিয়ানমার। দেশটিতে বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে জনবহুল এলাকাগুলো কেঁপে উঠলেও শুক্রবার শহরগুলো যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, ‘হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’ গতকাল শনিবার সরকারি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। এর আগে শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে দেশটিতে অন্তত ১১৪ জন নিহত ও ৭৩০ জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিলেন জান্তাপ্রধান।

ভূমিকম্পে মিয়ানমারের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে থাইল্যান্ডে। দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।

থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। একটি বহুতল ভবনসহ তিনটি নির্মাণাধীন স্থাপনায় নিখোঁজ আছেন অন্তত ১০১ জন। বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ব্যক্তিদের অনেকেই বেঁচে আছেন বলে গতকাল ধারণা প্রকাশ করেছেন ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিত্তিপান্ত।

মিয়ানমারের মান্দালয়ে বেশ কিছু ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় মঠও রয়েছে। কিছু ছবিতে রাজধানী নেপিডোর ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতে দেখা যায়। সেখানকার অনেক রাস্তা ফেটে গেছে। হাসপাতালগুলো আহত লোকজনে পূর্ণ হয়ে গেছে। মান্দালয়ের একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে ৯০ জনের বেশি লোক চাপা পড়েছে বলে রেডক্রসের এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে ভূমিকম্পে মান্দালয় অঞ্চলের কায়াউকসি শহরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষকসহ ১২ শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমার সরকার বলেছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় আহতদের জন্য রক্তের বিশেষ প্রয়োজন। মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’ চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ইতোমধ্যে ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে দেশটির ৩৭ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল। আর রাশিয়া ১২০ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল মিয়ামারে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ সরকারি সংবাদমাধ্যম তাস।

এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসহায়তা হিসেবে ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, তার দেশ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি যেভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তা কাটছাঁট করেছে, তাতে তার এ আশ্বাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কিছু বিশেষজ্ঞ।

মিয়ানমারের ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ বলেন, ‘ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।’ মান্দালয়ে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত একটি উদ্ধারকারী দল বিবিসিকে বলেছে, আমরা যন্ত্রপাতি ছাড়াই উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছি।

ভূমিকম্পের পর নেপিডো, মান্দালয়, সাইগাইংসহ ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শক্তিশালী কম্পনে নেপিডো, সাইগাইং, মান্দালয়সহ পাঁচটি শহরে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া একটি সেতু ও একটি রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরাবতী নদীর ওপর আভা সেতু ধসে পড়েছে।

মিয়ানমারের শোচনীয় এক সময়ে এই ভূমিকম্প হলো বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক জো ফ্রিম্যান। তিনি বলেন, দেশটিতে চলমান সংঘাতের কারণে এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সেখানে আগে থেকেই ত্রাণসহায়তার প্রয়োজন ছিল। এর মধ্যে ভূমিকম্পের কারণে সেই সংকট আরও তীব্র হলো।

অপরদিকে ভূমিকম্পের পরও মিয়ানমারের জান্তা সরকার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। সাইগাইং, কিয়ান স্টেট ও বাগো অঞ্চলে বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

চীনে আহত হওয়ার খবর

চীনের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে এবং মিয়ানমার সীমান্তের রুইলি শহরে ক্ষয়ক্ষতি ও কয়েকজন আহত হয়েছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য পেপার’কে একজন বাসিন্দা জানান, রুইলি থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে মাংশি শহরে এত জোরে কম্পন অনুভূত হয় যে, লোকজন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ভিশন নিউজিল্যান্ড মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসতে জরুরি ভিত্তিতে আবেদন জানিয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বড় আকারে সহায়তা কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।