দ্য ডিপ্লোম্যাটকে রাষ্ট্রদূত মুশফিক /
স্টারলিংকে যুক্ত হওয়া ইউনূস সরকারের সেরা সিদ্ধান্ত
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সঙ্গে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রস্তাবিত চুক্তির বাস্তবায়ন সময়ের সেরা পদক্ষেপ বলে মনে করেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
দ্য ডিপ্লোম্যাটকে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘এলন মাস্ক এবং তার প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রসর প্রযুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি যোগসূত্র তৈরি হবে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক মজবুত হবে।’
গত বৃহস্পতিবার দ্য ডিপ্লোম্যাটে মোবাশ্বার হাসানের লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট স্টারলিংক বাণিজ্যিকভাবে চালুর ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া। এ চুক্তি হলে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বের আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের সময় সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ১১ দিন ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখেন। এ সময়টাতে কাজ না করতে পেরে ক্ষতিগ্রস্থ হন বাংলাদেশের হাজার, হাজার ফ্রিল্যান্সার।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার চায় না দেশে এ রকম পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হোক। স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে বসেও একজন ফ্রিল্যান্সার নিরবিচ্ছিন ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন এটা নিশ্চিত করতে চাই।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে- অন্তর্বর্তী সরকারের এই চিন্তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। এর বাইরে ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে চুক্তিটিকে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ের সেরা পদক্ষেপ বলে মনে করেন এই রাষ্ট্রদূত।
দ্য ডিপ্লোম্যাটকে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘এলন মাস্ক এবং তার প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রসর প্রযুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি যোগসূত্র তৈরি হবে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক মজবুত হবে।’
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিষেকের পরই ভারতের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান- ভারতী এয়ারটেল এবং রিলায়েন্স জিও- ঘোষণা দেয় তারা দেশটিতে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান ‘কয়েন বেজ’কে ভারতে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে দেশটির ফিন্যানসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব।
স্টারলিংকের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির বিষয়টিকে অবশ্যই এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ শাফকাত রাব্বি বলেন, স্টারলিংকের সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে কতটা ফল বয়ে নিয়ে আসবে এটা নিয়ে এখনি মন্তব্য করার উপযুক্ত সময় নয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
শফিকুল বলেন, ইউনূসের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক ভিডিও কলে মাস্ক জানিয়েছেন যে তিনি ইউনূসের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির পাশাপাশি তার অন্যান্য জনহিতকর ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত এবং এগুলোকে তিনি সাধুবাদ জানান।
রিপোর্টে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো আশা করবে যে এই সমর্থনসূচক কথাগুলো ইউনূস এবং ধনকুবের মাস্কের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও মজবুত করবে, যার ফলস্বরুপ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অধিকতর দৃঢ় হবে।
এতে বলা হয়, ইউনূস এবং ট্রাম্পের মধ্যে অতীতে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। কেউ কেউ মনে করেন যে ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ইউনূসের বন্ধুত্ব ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে। তবে এই ধরনের মতামত গুরুত্ব দেওয়ার মতো যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই।
ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার - প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম- এ ভূষিত হয়েছেন। অনেক রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গেও তার দৃঢ় বন্ধুত্ব রয়েছে, যারা ইউনূসের বিরুদ্ধে হাসিনার বিচারিক হয়রানির প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদে জয়ের পর ইউনূস ট্রাম্পকে দ্রুত অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে ইউনূসের সরকারের শক্তিশালী সমালোচক রয়েছেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘উদ্বেগের বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস প্রশাসন।
রিপোর্টে বলা হয়, মাস্কের স্টারলিংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত চুক্তি ট্রাম্পের সঙ্গে ঢাকার উন্নত সম্পর্কের দরজা খুলে দেবে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সামনের সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের হিসাব-নিকেশের সমীকরণ কী দাঁড়ায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এতে বলা হয়, ট্রাম্পের অধীনে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ইউনূস প্রশাসনকে আরও বেশি পথ খুঁজতে হবে। এ পথগুলো হতে হবে স্থিতিশীল।