রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকছে না পুলিশ কর্তাদের সম্মিলন

ভিন্ন আঙ্গিকে হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ

শাহজাহান আকন্দ শুভ
২৯ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকছে না পুলিশ কর্তাদের সম্মিলন

পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৯ এপ্রিল। এবারের পুলিশ সপ্তাহ হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। বঙ্গভবনে থাকছে না রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন। আবার অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কার্যালয়েও থাকছে না অনুষ্ঠান। বাদ দেওয়া হয়েছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেডও। আরও বেশ কিছু ইভেন্ট কাটছাঁট করা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোয় অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মুখ দেখে পুলিশ পদক দেওয়া হতো, এবার আর সেটি হবে না। পদকের সংখ্যাও কমবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

বিগত বছরগুলোয় সবসময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে প্যারেডের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করতেন সরকারপ্রধান। তারপর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কল্যাণ সভা করা হতো। এবার প্যারেড অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে। কল্যাণ সভার আয়োজন থাকছে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে। সেখানে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। সভায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ৬ জন পুলিশ সদস্য দাবি-দাওয়া তুলে ধরার কথা রয়েছে। আর পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন বিকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মেলন করবেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি)। এই সম্মেলনে আইজিপি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন রয়েছে একগুচ্ছ ইভেন্ট। এর মধ্যে রয়েছে এসবি, সিআইডি, ট্যুরিস্ট পুলিশ, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, পিবিআই ও র‌্যাব বিষয়ক প্রেজেনটেশন। এসব প্রেজেনটেশনে স্ব স্ব ইউনিটের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। পুলিশের প্রতিটি ইউনিট তাদের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। এ ছাড়া থাকছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন। এতে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরা হবে। একই দিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবগণের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবার পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পত্রিকায় কোনো ক্রোড়পত্র প্রকাশ হবে না। রেডিও-টেলিভিশনেও থাকবে না বিশেষ অনুষ্ঠান।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চায় পুলিশ। এ জন্য প্রথমবারের মতো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিন ১ মে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে পুলিশ। প্রধান আলোচক হিসেবে ড. সলিমুল্লাহ খানকে প্রাথকিভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া মতবিনিময় সভায় একজন সাংবাদিক প্রতিনিধি, শ্রমিক প্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনবে পুলিশ। ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’Ñ এ ব্যাপারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ মতামত তুলে ধরবেন।

বিগত বছরগুলোয় ভিন্ন মত দমন, গুম, খুনসহ রাতের ভোটের জন্যও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপিএম, পিপিএম, বিপিএম সেবা ও পিপিএম সেবা পদক দেওয়া হয়েছে। সরকারপ্রধানরা পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের এসব পদক পরিয়ে দিতেন। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ইতোমধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোটের জন্য পুলিশ ও র‌্যাবের হয়ে দায়িত্ব পালন করা ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে এবার পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে বিতর্কমুক্ত ভালো কাজের জন্য পুলিশ পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এবার খুব কম সংখ্যক সদস্যকে এই পদক দেওয়া হবে। বিতর্ক তৈরি হয়Ñ এমন কাউকে পুলিশ পদক দেওয়া হবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আগের মতো মুখ দেখে আর পদক দেওয়া হবে না। পদকের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হবে। কারা পদক পাবেন এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আবেদন আসছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। থানা, ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সদস্যদের মারধর, এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে একের পর এক প্রাণহানি তথা হতাহতের ঘটনায় পুলিশ বাহিনী জনগণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। এতে চরম সংকটে পড়ে বাহিনীটি। পুলিশ সদস্যদের মনোবলেও বড় চির ধরে। সেই থেকে ধাপে ধাপে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে এবার পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠান হবে। আগামী ২৯ ও ৩০ এপ্রিল এবং ১ মে ধরে পুলিশ সপ্তাহ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে শেষ সময়ে এই তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।