জগন্নাথপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্ধ নিয়ে থাকেন বিদেশে
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় পাটলী ইউনিয়নের বনগাওঁ গ্রামের গৃহহীন ভূমিহীন দুস্থ পরিবারের জন্য বানানো সরকারি ঘর কৌশলে বরাদ্দ নিয়েছে কিছু মানুষ। যাদের এই ঘরের তেমন একটা দরকার নেই। এদের কারও কারও নিজের ঘর-বাড়ি-জমি সবই আছে। তাই নিজের নামে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিলেও সেই ঘরে তারা থাকেন না, থাকে তালাবদ্ধ।
জানা গেছে, রাস্তাঘাট, চিকিৎসা আর কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে অনেকে আছেন নিজের বাড়িতে কিংবা পরিবারের সঙ্গে থাকছেন ভাড়া বাড়িতে। অনেকেই ঘরে তালা দিয়ে বাড়িতে পাড়ি জমিয়েছেন, আবার কেউ কেউ প্রবাসে রয়েছেন। প্রবাসে থেকেও নিজের নামে ঘর বন্দোবস্ত পেলেন।
১৪ নং ঘরের লোক মো. নুর মোহাম্মদ ওমান, বন্দোবস্ত মামলা নং ১২৫/২৩-২৪ ১৮ নং ঘরের লোক সেলিম আহমেদ বন্দোবস্ত মামলা নং ১২৯/২৩-২৪ বর্তমানে দুইজনই ওমানে রয়েছেন। বরাদ্দকৃত ঘর রয়েছে তালাবদ্ধ। বনগাঁও গুচ্ছগ্রামের বরাদ্দকৃত ঘর পাওয়া ১০ জন লোক স্বাক্ষরিত সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর লিখিত আবেদন জানান। আবেদন উল্লেখ করেন, অনেকজন ঘরে থাকেন না, তারা যদি না আসে তাদের ঘর বাতিল করে অন্য হত দরিদ্র পরিবারকে ঘর দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।
কথা হয় আশ্রয় প্রকল্পের থাকা সুজন মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, সরকার দুই শতক জায়গা একটি পাকা ঘর ৬০টি পরিবারের হতদরিদ্র লোকদেরকে বন্দোবস্ত দিয়েছে। এরই মধ্যে ২ জন প্রবাসে রয়েছেন ১৪ নং ঘরের নুর মোহাম্মদ ও ১৮ নং ঘরের সেলিম আহমেদ রয়েছেন ওমানে। এদিকে ২৭ নং ঘরটি জামাল আহমেদ নামে এক লোকের নামের বরাদ্দ হয়েছে। তিনি থাকেন আরেক প্রবাসী বাড়িতে।
পাটলী ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ৬০টি পরিবারের মধ্যে ৮/১০ টি ঘর তালাবদ্ধ থাকে বছর পর বছর। ঘরগুলোর বারান্দায় আবর্জনায় ভরা। ঘরের দরজায় মাকড়সার জালে ঘিরে আছে। কারো তালাবদ্ধ থাকা ঘরটির দেখভাল করেন ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবেশীরা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, ঘর বরাদ্দ হওয়ার স্বামী ওমানে থাকেন । নিজের বাড়ি আছে, বাচ্চা দুটোর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আশ্রয়ণের ঘরে থাকা হচ্ছে না।
ওই আশ্রয়ণের আরেক ঘর পাওয়া জামাল আহমেদের সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামে এক প্রবাসীর বাড়িতে থাকতাম। মাঝে মাঝে এসে খোঁজখবর নিয়ে আবার চলে আসি। কিছুদিন পর আমি আমার ঘরে আসব। ইউনুস নামে একজনকে এমনিতেই থাকতে দিয়েছি।’
এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবেশী জরিপ উল্লাহ পীর বলেন, ‘এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭/৮ পরিবার ঘরে কেউ থাকেন না। এখানে যারা থাকেন, তারা নিতান্তই গরী, দিনমজুর। আর যারা থাকেন না, তাদের নিজস্ব ঘর আছে, জমি আছে। এদের মধ্যে ২ জন বিদেশে আছেন। সামর্থ্য থাকার পরও যারা এ ঘর পেয়েও ব্যবহার করছেন না, এদের কাছ থেকে ঘর ফেরত নিয়ে সরকার যদি প্রকৃত দুস্থদের দিত তাহলে তাদের খুব উপকার হতো।’
গুচ্ছগ্রামে থাকা আরেক বাসিন্দা পরিমল কর জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ও সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তারা তদন্ত করে তাদের ঘর বাতিল করা হোক।
এ বিষয় জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছি। যাদের নিজের ঘর আছে কিংবা ঘর পেয়ে যারা বিদেশে থাকেন তাদের নোটিশ করা হবে। এ রকম হলে তাদের ঘর বাতিল করে অন্য অসহায় লোকদেরকে দেওয়া হবে।’
পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঙ্গুর মিয়া জানান, গুচ্ছগ্রাম ঘর নিতে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে, অনেকেই তথ্য গোপন করেছেন। পরে শুনেছি। দুইজন ওমানে রয়েছেন আজ শুনলাম। তথ্য গোপন রাখলে সহকারী কমিশনার ভূমি ঘর বাতিল করে অন্য লোককে দিয়ে দিবেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ এসেছে তদন্ত করে সত্যি ঘটনা হলে তাদের ঘর বাতিল করে অন্য পরিবারকে দেওয়া হবে। আমাদের কাছে অনেক অসহায় পরিবারের আবেদন রয়েছে, দিতে পারতেছি না।’