চমকে ভরা ‘ইত্যাদি’

বিনোদন প্রতিবেদক
২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩:০৯
শেয়ার :
চমকে ভরা ‘ইত্যাদি’

প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ আনন্দের সাথে দর্শকদের জন্য বাড়তি আনন্দ নিয়ে আসছে হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’। ১৯৯৮ সালে মিরপুর ন্যাশনাল সুইমিং কমপ্লেক্সে ধারণের মধ্যদিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ইত্যাদির ঈদের বিশেষ পর্বের দৃশ্যধারণ যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে বেশ কয়েক বছর নিয়মিতভাবে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে ঈদের ইত্যাদি ধারণ করা হলেও এবার ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ব্লু স্কাই গার্ডেন সংলগ্ন একটি দৃষ্টিনন্দন স্থানে।

বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদি শুরু করা হয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানটি দিয়ে। ঈদ পর্বে গত তিন দশক ধরেই শতশত মানুষ নিয়ে ঢাকায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই গানটি পরিবেশিত হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারে এই গানটি পরিবেশন করবেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের সম্মিলিত বর্ণিল পরিবেশনা ও স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শকের অংশগ্রহণে পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী।

এবারের ঈদের বিশেষ ইত্যাদির চমকানো সব বিষয়ের মধ্যে একটি বিশেষ পর্ব হচ্ছে দেশাত্মবোধক গান। এবারের ঈদ ইত্যাদির ‘দেশের গানটি’তে কণ্ঠ দিয়েছেন নন্দিত শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ও সাবিনা ইয়াসমিন। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এই প্রজন্মের দশজন জনপ্রিয় শিল্পী ইমরান মাহমুদুল, রাজিব, অয়ন চাকলাদার, রাশেদ, সাব্বির জামান, সিঁথি সাহা, অবন্তী সিঁথি, আতিয়া আনিসা, মালিহা তাবাসসুম খেয়া ও সানিয়া সুলতানা লিজা। ‘ও বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ’ শিরোনামে গানটির কথা লিখেছেন খ্যাতিমান গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন শওকত আলী ইমন। এছাড়াও ইত্যাদির শিল্পী নির্বাচনে সবসময়ই থাকে চমক। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদের বিশেষ ইত্যাদির বিশেষ চমক হচ্ছে এই প্রথম একসঙ্গে ইত্যাদির একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় দুই সংগীত তারকা হাবিব ওয়াহিদ ও প্রীতম হাসান। গানটির কথা লিখেছেন ইনামুল তাহসিন, সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন প্রীতম হাসান।

অন্য একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় ঢালিউড অভিনেতা সিয়াম আহমেদ ও ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। এই দুই শিল্পী একসঙ্গে কখনও অভিনয় না করলেও ইত্যাদিতে তারা একসঙ্গে গাইলেন একটি চমৎকার রোমান্টিক গান। টিভি পর্দায় কোনো অনুষ্ঠানে তাদের দুজনের এটাই প্রথম গান গাওয়া। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল। সুর ও সংগীত করেছেন ইমরান মাহমুদুল।

ইত্যাদির নাচ মানেই বর্ণাঢ্য আয়োজন, প্রতিবারই চেষ্টা করা হয় নাচের মিউজিক, বিষয়, চিত্রায়নে বৈচিত্র্য আনতে। এবারের ইত্যাদিতেও একটি ভিন্ন আঙ্গিকের নাচের আয়োজন করা হয়েছে। আর এই নাচটিতে অংশগ্রহণ করেছেন এই সময়ের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী সাফা কবির, সাদিয়া আয়মান, সামিরা খান মাহি ও পারসা ইভানা। তাদের সঙ্গে রয়েছে একদল নৃত্যশিল্পী। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। নাচটির সংগীত পরিচালনা করেছেন আকাশ মাহমুদ।

ইত্যাদির প্রতিটি পর্বই সাজানো হয় নির্দিষ্ট কিছু বার্তা দিয়ে। এবারও রয়েছে বেশকিছু সমাজ সচেতনতামূলক পর্ব। এর মধ্যে অনলাইনকেন্দ্রিক তিনটি ভিন্ন ঘটনা, সুরে সুরে তুলে ধরেছেন তিন জনপ্রিয় দম্পতি। তারা হলেন শহীদুজ্জামান সেলিম-রোজী সিদ্দিকী, এফ এস নাঈম-নাদিয়া আহমেদ ও ইন্তেখাব দিনার-বিজরী বরকতউল্লাহ দম্পতি। আর মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত আর একটি মিউজিক্যাল ড্রামায় অভিনয় করেছেন গুণী অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী ফজলুর রহমান বাবু, মোমেনা চৌধুরী, আনোয়ার শাহী ও র‌্যাপ শিল্পী মাহমুদুল হাসান।

সমকালীন ও বক্তব্যধর্মী এবারের দলীয় সংগীতের বিষয় ‘দেখার চোখ ও বিবেকের চোখ’ নিয়ে। এই পর্বে অংশগ্রহণ করেছেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী তৌসিফ মাহবুব ও আলোচিত চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন ইত্যাদির নিয়মিত নৃত্যশিল্পীদল। গানটির কথা লিখেছেন খ্যাতিমান গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী। কণ্ঠ দিয়েছেন তানজিনা রুমা, রাজিব ও খেয়া। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ইত্যাদির নৃত্য পরিচালক মামুন।

প্রায় দুই যুগ ধরে ইত্যাদিতে বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে দেশীয় লোকজ সংস্কৃতি, বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়মিতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। এর ফলে বিদেশিদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি। নাচ-গান ও গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তুখোড় অভিনয়সমৃদ্ধ এবারের পর্বের বিষয় ‘গুজব’।

প্রতিবারই ইত্যাদির দর্শক নির্বাচন প্রক্রিয়া থাকে ভিন্ন রকম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যতিক্রমী উপকরণের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩ জন দর্শকের মুখোমুখি হয়েছেন খুব অল্প কাজ করে স্বল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান।

ইত্যাদির গত পর্বের ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও মুখোমুখি হয়েছেন ইত্যাদির নিয়মিত চরিত্র নাতি ও কাশেম টিভির রিপোর্টার। এ ছাড়াও রয়েছে ঈদকে ঘিরে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডজনখানেক নাট্যাংশ। এসব পর্বে অভিনয় করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনয় শিল্পীরা।

ইত্যাদির শিল্প নিদের্শনা করেছেন যথারীতি মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। স্পন্সর করেছে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড। ঈদের বিশেষ ইত্যাদি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত হবে ঈদের পরদিন রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর।