জনগণ রাজনীতিবিদদের কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করে না: জামায়াত সেক্রেটারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ মার্চ ২০২৫, ২০:২২
শেয়ার :
জনগণ রাজনীতিবিদদের কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করে না: জামায়াত সেক্রেটারি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জনগণ রাজনীতিবিদদের কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করে না। কোন দলের কোন নেতার পরিবারের কারা কারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, সেটা এদেশের জনগণ জানে। আজকে যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলে, তারাও কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের এমপি-মন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি করে না।’

আজ বুধবার ‘মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কখনো চায়নি পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হোক। তিনি দেশপ্রেমে নয়, ক্ষমতার মসনদে বসার লড়াই করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। ৭ মার্চ যদি শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই থাকে, তাহলে ৭ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ শেখ মুজিব পাকিস্তানি শাসকদের সাথে আলোচনায় বসলো কেন? এ প্রশ্নের জবাব আজও আওয়ামী লীগ জাতির সামনে দিতে পারেনি।’

 মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এদেশে আমরা যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছি তাদের এদেশ ছেড়ে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। আমাদের চারিদিকে আমাদের আধিপত্যবাদী শক্তি, আরেক পাশে বঙ্গোপপসাগর। ফলে আমাদের জীবন ও অস্তিত্বের প্রয়োজনে আমরা এ দেশকে ভালোবাসি। আমাদের ঈমান ও ইসলামের স্বার্থে এ দেশকে ভালোবাসি। তাই ইসলামই মূলত স্বাধীনতার গ্যারান্টি।’  

তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের এই দেশকে নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এরই অংশ হিসেবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছে ভারত। যার কারণে তারা আমাদের দেশ নিয়ে তাদের মিডিয়াতে নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে এবং প্রচার ও প্রকাশ করছে।’  বিরোধিতা করার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার এবং পূর্বের ইতিহাস জানারও পরামর্শ দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের সঙ্গে থাকলে হয় সঙ্গী আর সঙ্গে না থাকলে হয় জঙ্গি! যারা জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতাবিরোধী বলে, তাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র পড়ার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে অনেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যা করার পরও জামায়াতে ইসলামীয় জাতীয় স্বার্থে সব কিছু ভুলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করেছে। তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় স্বার্থে সব দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মতের দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদেরকে এক হতে হবে।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ব্যাখ্যা করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে এবং গণহত্যার বিচার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন নির্বাচন দিবে জামায়াতে ইসলামী তখনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শুধু নিয়ম রক্ষার একটি নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সোল এজেন্ট দাবি করে তাদের কতজন নেতা মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনা মীমাংসিত।’

তিনি বলেন, কারও প্রতি আর কোনো রাগ ক্ষোভ না রাখার এবং সকল ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেছে ড. কামাল হোসেন। যিনি এখনো বেঁচে আছেন। তবে তার নিরবতায় জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম খান ড. কামাল হোসেনকে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জাতির সামনে পরিস্কার করার দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ক্রেডিট ছাত্রদের দিতে হবে। যারা এই ক্রেডিট নিজেদের দলের দাবি করে, তারা আওয়ামী লীগের মতোই ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগ ১৯৭১ হাইজ্যাক করেছে, এরা ২০২৪ হাইজ্যাক করতে চায়।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিস্টের বিদায়ের পর বাংলাদেশ বড় দল দুটি। একটি বিএনপি, অপরটি জামায়াতে ইসলামী। জনগণ যদি বিএনপিকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয় জামায়াতে ইসলামীর কোনো আপত্তি নাই, কিন্তু জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয় তাহলে মৌলবাদ বলে গালি দেওয়ার কারণ কী?- তাহলে কি জনগণকে বিশ্বাস করতে পারেন না?- তিনি কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি পরিহার করে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 

 আরেক সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল হালিম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিল বাকশাল কায়েমের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। কারণ বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ আমাদের গর্বের। কিন্তু কেউ কেউ ১৯৭১ কে পুঁজি হিসেবে গ্রহন করে ১৯৪৭, ৫২, ৬৯, ২০২৪ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রাম স্বীকার করছে না। এটি কাম্য নয়। সকল আন্দোলন সংগ্রামকে স্বীকার ও বিশ্বাস করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২০২৪-এর শহিদদের রক্তের কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে পারছে, কিন্তু যাদের রক্তের বিনিময়ে কথা বলার, সংগঠন করার স্বাধীনতা আসছে তাদের হত্যার বিচার না করে, শহিদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের প্রত্যাশিত সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা অর্জিত হবে না। বরং শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা হবে। তাই তিনি গণহত্যার বিচার ও সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।

 সভাপতির বক্তব্যে অ্যাভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীন দেশে বিগত ৫৪ বছরে দেখা গেছে কখনো বাকশাল, কখনো সামরিক শাসন আবার কখনো ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা। এই কারণেই ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে।

জনগণ রিফাইন আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একতরফা যেই ৩টি সংসদ নির্বাচন করেছে সেই নির্বাচনের সময় ভারত যেই ভূমিকা রেখেছে আগামীতেও ভারত সেই ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের নির্বাচন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত নাক গলালে এদেশের জনগণ সেটি সহ্য করবে না।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মো. দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. শামছুর রহমান, কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ মহানগরীর নেতারা।