বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম কম
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেছেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম কম। পার্শ্ববর্তী দেশে ডিমের দাম কম বলা হলেও প্রকৃত বিচারে কম নয় কারণ তাদের ডিমের দাম ১০ শতাংশ কম হলে ডিমের ওজনও ১৩ শতাংশ কম। তাছাড়া তারা যে মানের ফিড খাইয়ে ডিম উৎপাদন করে সে তুলনায় বাংলাদেশের ফিডের মান অনেক ভালো।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বাংলামোটরে এক রেঁস্তোরায় পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
এই মতবিনিময় সভায় খামারিরা সারা বছর সরকার নির্ধারিত প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা করে বিক্রির জন্য সরকারের সহায়তা চান।তারা বলেছেন, প্রতিবছর রমজান মাসে ডিমের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে ডিমের দাম কমে যায়। বর্তমানে সাড়ে ৭ টাকা থেকে ৮ টাকা দরে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে। এতে খামারিরা চরম লোকশান গুণছে। তাই যখন ডিমের দাম কমে যায় তখনও যেনো নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারে সেজন্য কম দামের সময় যেন সরকার ভর্তুকি দেয় সেই ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন খামারিরা।
মতবিনিময় সভায় খামারি ও পোল্ট্রি নেতারা বলেন, চলতি মাসে ডিমের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ বার ডিম-মুরগির দরপতন হচ্ছে, অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছেন। খামারির সুরক্ষা, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন।
মতবিনিময় সভায় তৃণমূল খামারিদের ঝরে পড়া রোধে ৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে; সরকারিভাবে ডিম-মুরগির ‘সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য” নির্ধারণের পাশাপাশি ‘সর্বনিম্ন মূল্য’ নির্ধারণ করতে হবে; কোল্ডস্টোরেজে ডিম সংরক্ষণের সরকারি বাধা প্রত্যাহার করতে হবে; অফ-সিজনে তৃণমূল খামারিদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে; ডিম-মুরগির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন বিষয়ক কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে গড়ে সাড়ে ৮ টাকায়। অন্যদিকে টাঙ্গাইল ও নরসিংদিসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হয়েছে গড়ে প্রায় ৮ টাকায়।
তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিটি ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে- খামার পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সাা, পাইকারিতে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ১০ টাকা ১৯ পয়সা। সে হিসাবে প্রতিটি ডিম বিক্রি করে খামারির লোকসান হচ্ছে গড়ে প্রায় ১ টাকা ৬৯ পয়সা থেকে ২ টাকা ১৯ পয়সা। ডিমের দৈনিক উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি পিস ধরলে, বিগত ২১ দিনে খামারির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৯ থেকে ২০৬ কোটি টাকা। লোকসান সামাল দিতে না পেরে অনেক খামারি মুরগি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন- যা অত্যন্ত আশংকাজনক কারণ রমজান শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত খুললে চাহিদা বাড়বে আর তখন সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হলে দাম বাড়বে।
মসিউর বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম কম। পার্শ্ববর্তী দেশে ডিমের দাম কম বলা হলেও প্রকৃত বিচারে কম নয় কারণ তাদের ডিমের দাম ১০ শতাংশ কম হলে ডিমের ওজনও ১৩ শতাংশ কম। তাছাড়া তারা যে মানের ফিড খাইয়ে ডিম উৎপাদন করে সে তুলনায় বাংলাদেশের ফিডের মান অনেক ভাল।
ওয়াপসা-বিবি’র সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিম অনেক নিরাপদ কারণ তাঁদের ফিডে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার ও মিট এন্ড বোনমিল ব্যবহার করা হয় কিন্তু আমাদের দেশে এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশি দেশে খামার থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে দামের ব্যবধান থাকে মাত্র এক টাকা; সেখানে আমাদের দেশে ৩ থেকে ৪ টাকা। তাই ডিমের দাম কমাতে হলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীর সংখ্যা কমাতে হবে।
ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) এর সাধারণ সম্পাদক শাহ্ ফাহাদ হাবীব বলেন, চলতি মাসে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দামেও পতন হয়েছে। সারাবছর জুড়ে ভারসাম্যপূর্ণ বাজার ধরে রাখা সম্ভব হলে খামারি ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন।
এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব)-এর সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলম বলেন, ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও এসেছে যতসামান্যই। এখন তো ডিমের চাহিদা কম তাহলে সরকারের উচিত হবে ডিম রপ্তানি করে খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করা।
গাজীপুর মাওনার খামারি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘৭ টাকা ৩০ পয়সায় ডিম বিক্রি করতে হয়েছে; ডিম সংরক্ষণ করতে পারিনি কারণ সংরক্ষণ করলে অভিযান চালানো হয়, জরিমানা আদায় করা হয়। সরকার খামার পর্যায়ে ডিমের দাম নির্ধারণ করেছে কিন্তু আমরা সে দামে বিক্রি করতে পারছিনা। তিনি বলেন- ডিমের দাম বাড়লে আমাদের সাথে এমন আচরণ করা হয় যেন আমরা কোনো দাগি আসামি। যৌক্তিক লাভ করার অধিকার আমাদেরও আছে।’
তোফাজ্জল বলেন, ‘আমরা নিজের জন্য উৎপাদন করি না বরং ভোক্তার জন্যই উৎপাদন করি।’