ন্যায়বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনই এনসিপির এজেন্ডা: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক রোডম্যাপ তিনটি মূল এজেন্ডার ওপর ভিত্তি করে, ন্যায়বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ গঠন। এই গণপরিষদ হবে পরবর্তী সংসদ, যা একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে, কারণ বর্তমান সংবিধান মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ। শুধুমাত্র একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়া সম্ভব।’
আজ সোমবার বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে করা এনসিপির ইফতার মাহফিলে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টও স্পষ্টভাবে বলছে-বাংলাদেশে গভীর কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন। আমরা একটি দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই। এটি হবে এমন একটি বাংলাদেশ, যা সত্যিকার অর্থে এর মানুষের বৈচিত্র্যকে ধারণ করবে।’
এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদ ও চেতনার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সংগ্রামের ফসল। ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটি প্রজন্ম স্বাধীনতা, মর্যাদা ও ন্যায়ের জন্য লড়াই করেছে। আমরা সেই গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরাধিকারী এবং আমাদের লক্ষ্য হলো তার অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
গাজায় হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজ আমি আমাদের দেশীয় সংগ্রাম ও প্রত্যাশার কথা বলার আগে, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংকট নিয়ে কথা বলতে চাই, যা আমাদের সকলের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা গাজার নিরীহ মানুষের ওপর চলমান নির্মম হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের চোখের সামনে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে, তা সমগ্র বিশ্ব-মানবতার জন্য এক কলঙ্ক। প্রতিটি দেশ, প্রতিটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তির উচিত এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
‘এছাড়া, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট আমাদের অন্যতম গুরুতর মানবিক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে মহানুভবতা দেখিয়েছে, তা অনন্য। কিন্তু এই বোঝা শুধু বাংলাদেশের একার নয়, হওয়া উচিতও নয়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, যেন তারা রোহিঙ্গাদের টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’
নাহিদ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রয়োজন পারস্পরিক সম্মান, ন্যায়বিচার, এবং জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা; যেখানে কোনো দেশ নিজেকে অপরের কর্তৃত্বের নিচে অনুভব করবে না এবং প্রতিটি জাতির সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জুলই অভ্যুত্থানের সবার অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে। ছাত্র-যুবক, নারী, শ্রমজীবী মানুষ, সর্বস্তরের নাগরিক সকলেই দেশকে রক্ষা করতে রাস্তায় নেমেছিল। এটি ছিল আমাদের সময়ের অন্যতম শক্তিশালী গণতান্ত্রিক গণজাগরণ, যার ভিত্তি ছিল সাধারণ কিন্তু গভীর দাবি, একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’
বিশেষ করে ছাত্র ও জেনারেশন জেড (এবহ ত) নিরস্ত্র থেকেও দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ‘অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার ‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ অন্যতম প্রধান দাবি। এই সাহসী তরুণরা দেখিয়েছে-যখন নাগরিকরা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস হারায়, তখন তারা নীরব থাকে না। তারা জেগে ওঠে। তারা লড়াই করে। তারা স্বপ্ন দেখে এবং এই কারণেই ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির জন্ম হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।’
এ সময় দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনেও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) বহুদলীয় গণতন্ত্রে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক দায়িত্ববোধ ও সামাজিক সম্প্রীতির ভিত্তিতে একটি ন্যায্য সমাজ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একইসঙ্গে আমরা দাবি জানাই-অতীতের ফ্যাসিবাদী শক্তির দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যে সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমরা তার ফলাফল নিয়ে আশাবাদী।’
ইফতারে আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, সুইডেন, নরওয়ে, সিংগাপুর, সাউথ কোরিয়া, জার্মানি, চীন, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, নেপাল, ডেনমার্ক, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, কসোভো, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জাপান, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়ার কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।