চুরির অভিযোগে ধরা পড়া দুই কিশোরের ভিডিও করায় মামলা

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
২১ মার্চ ২০২৫, ১৯:২৫
শেয়ার :
চুরির অভিযোগে ধরা পড়া দুই কিশোরের ভিডিও করায় মামলা

নেত্রকোনার মদনে টাকা চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে দুই কিশোর। তাদেরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন মালিক। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেইসবুকে পোস্ট করায় তিন সাংবাদিক ও একজন নির্যাতনকারীর নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার মহিউদ্দিন মার্কেটে এক নারীর ব্যাগ থেকে টাকা ছিনতাই করে হাতেনাতে ধরা পড়ে আজহারুল।

মামলার আসামিরা হলেন, সাংবাদিক সুদর্শন আচার্যা (৪২), পরিতোষ দাস (৫০), মো. তানভির (২৫) ও বাসের হেল্পার সোকেল মিয়া (২৫)।

চুরির অভিযোগে নির্যাতনের শিকার কিশোররা হল- চানগাঁও চকপাড়া নাগবাড়ী মৃত আলতু মিয়ার ছেলে মো. মাজহারুল (১৩) ও পৌরসভার ইমদাদপুর সওদাগর পাড়া মৃত রফিকুলের ছেলে মো. জাহিদ মিয়া (১২)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, গত ১৯ মার্চ বুধবার সকালে মদন উপজেলার সিলেট বাস স্ট্যান্ড এলাকার একটি বাস থেকে তিনটি মোবাইলসহ নগদ টাকা চুরি করে দুই কিশোর। এসব জিনিস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাসের হেলপার তাদের হাতনাতে ধরে ফেলে। পরে তাদেরকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুকুরপাড়ে একটি নারিকেল গাছে বেঁধে রাখে। এ সময় কিশোররা চুরি করার বিষয়টি স্বীকারও করে। এ ঘটনার ভিডিও দুইজন সাংবাদিকসহ এলাকার বিভিন্ন লোক ফেসবুকে পোস্ট করে। ভিডিও চিত্র দেখে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে ২০ মার্চ মদন থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু পুলিশ রাতে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয়। আবার ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মহিউদ্দিন মার্কেটে এক নারীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনারও একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল চুরির সন্দেহ করে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে নির্যাতন করা হয়। পরে মদন থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে দুই কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় নির্যাতনকারী সোকেল মিয়াকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। মারধরের ভিডিও ফেইসবুকে সাংবাদিক সুদর্শন আচার্য ও মো. তানভির পোস্ট করেন। এতে তাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মান সম্মানের হানি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিউদ্দিন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী কয়েকজন জানান, মাজহারুল ও জাহিদ নামে দুটি ছেলে আরও বেশ কয়েকবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ মার্কেটের কেনাকাটা করতে আসা এক নারীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। এদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চুরির অভিযুক্ত মো. মাজহারুল চাচা মোশারফ হোসেন বাবুল মোবাইল ফোনে জানান, কি কারণে মামলা করেছি অভিযোগে উল্লেখ আছে। তিনি জানতে চান, নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার নিয়ম আছে কি না।

মদন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইমরান জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতনের স্বীকার কিশোরদেরকে তাদের পরিবারের লোকজনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মরতা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, বাবুল নামের এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দিয়েছে চুরির অপবাদে তার ভাতিজাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করার। তদন্ত করার দায়িত্ব আমাদের।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি ছেলের বয়স কম। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ কারণে আমরা উপজেলা সমাজ সেবার কাছে কিশোর দুটিকে দিয়েছিলাম।

পরদিন উপজেলা মহিউদ্দিন মার্কেটে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। এর ভিডিও ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট করেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।